মুক্তিযুদ্ধের আরব্ধ কাজ

দীর্ঘকাল ধরে আমরা বলে এসেছি, দেশের মানুষ স্বাধীনতার সুফল পায়নি। রাজনৈতিক মতাদর্শ যা-ই হোক, এ বক্তব্য সবারই। আর নিতান্ত পাকিস্তানপন্থী মানুষ ছাড়া বাকি সবাই দেশের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বলে এসেছে, মুক্তিযুদ্ধ অসমাপ্ত রয়েছে। একাত্তরের আরব্ধ কাজ, অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ সমাপ্ত করার কাজ এবং স্বাধীনতার সুফল সবার ঘরে পৌঁছে দেওয়ার কাজ কে করবে, কখনই বা করবে?

মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে দেশবাসীকে নিয়ে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। মানতেই হবে, সে সময় শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী এবং বাম প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ ও ছাত্ররাজনীতি থেকে বিরাট সমর্থন পাওয়া গিয়েছিল। এ এক বিশাল কাজ, মহান কর্মযজ্ঞ- একটি ঘরকুনো অলস ও কলহপ্রিয় জনগোষ্ঠী তাঁর জাদুকরি নেতৃত্বের গুণে রূপান্তরিত হয়েছিল ঐক্যবদ্ধ ত্যাগী বীরের জাতে। তাই বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে যা হয়নি, তা বঙ্গবন্ধুর পক্ষে করা সম্ভব হয়েছিল- এই মাটির সন্তানদের নেতৃত্বে মূলত তাদেরই এক স্বাধীন আবাসভূমি প্রতিষ্ঠা।

কিন্তু স্বাধীনতার পর, বিশেষত পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর বোঝা গেল, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে বিজয় অর্জিত হয়েছে, তাকে সবার জন্য অর্থবহ স্বাধীনতায় পরিণত করতে হলে আরও কাজ বাকি আছে। এখানে জাতীয় পর্যায়ে জরুরি অর্জনের ক্ষেত্রে মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার কথা বলা যায়- সবার জন্য অন্তত এসএসসি পর্যন্ত শিক্ষা, সবার জন্য দুই বেলা সুষম খাবার, সবার জন্য বস্ত্র, সবার জন্য চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা এবং সবার জন্য আবাসন। শেষ দুটি চাহিদা পূরণে একটু সময় লাগবে, সেটা সবাই বোঝে। তবে দেখা যাচ্ছে, বঙ্গবন্ধু-কন্যা সবার জন্য স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার বিষয়টি তাঁর চিন্তা ও কর্মপরিকল্পনায় অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। কিন্তু স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত কাজের আরও একটি দিক আছে, সেটি মূলত রাজনৈতিক। জাতীয় লক্ষ্যাদর্শ যদি ঠিক না থাকে, এ বিষয়ে যদি জাতীয় মতৈক্য তৈরি না হয়, তাহলে রাজনীতিতে আদর্শিক বিরোধ কখনোই মিটবে না, বরং চরম সংঘাতের দিকে চলে যেতে পারে।

এ দেশের মানুষ গত শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাট- এই দুই দশকের সংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তানি রাষ্ট্র ও জাতি গঠনের মূলনীতি ও আদর্শের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। পাকিস্তান রাষ্ট্র পরিচালনা ও এর জাতি গঠনে ধর্মীয় পরিচয়কে প্রাধান্য দিয়েছিল, তাই দেশটি হয়ে উঠেছিল সাম্প্রদায়িক। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, স্থানীয় বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহাসিক পরম্পরা অগ্রাহ্য করে ধর্মভিত্তিক কৃত্রিম জাতীয় সংস্কৃতি গড়ে তুলতে চেয়েছিল।

ধর্ম ও সংস্কৃতি নিয়ে জবরদস্তির কারণে পাকিস্তানে গণতন্ত্র শেকড় গাড়তে পারেনি, দেশটি সামরিক স্বৈরতন্ত্রের কবজায় চলে গিয়েছিল এবং শাসকশ্রেণীতে পাঞ্জাবি আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তাই রাজনীতি ও সংস্কৃতি-সচেতন বাঙালি এই বাস্তবতাকে মেনে নেয়নি। লেখক-সাংবাদিকদের লেখনী, শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের বিশ্লেষণ এবং শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের প্রতিবাদী সৃজনশীল ব্যাপক তৎপরতাকে চূড়ান্ত রূপ দিয়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা, স্বাধীনতার স্বপ্নে জাগিয়ে তোলা এবং শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ত্যাগে উদ্বুদ্ধ করে মহান অর্জনের জন্য তৈরি করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। আমরা আজ বলছি, সেই কাজ একাত্তরে সম্পূর্ণ সাফল্যের সঙ্গে সমাপ্ত হয়নি।

আমরা দেখেছি, পঁচাত্তরের পর খন্দকার মোশতাক ও জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ধীরে ধীরে দেশটিকে এবং জনগণকে পরিত্যক্ত পরাভূত পাকিস্তানি মানসিকতা ও শাসনব্যবস্থার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের মতোই ধর্মভিত্তিক জাতীয়তার পক্ষে অবস্থান নিল রাষ্ট্র, যার কারণে রাষ্ট্র হয়ে পড়ল সাম্প্রদায়িক; সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও একই প্রভাব পড়ল। রাষ্ট্র পরিচালনায় সামরিক বাহিনীর ভূমিকা প্রকট হয়ে উঠল, গণতন্ত্র বলতে স্বৈরশাসকের ছদ্মাবরণের বেশি কিছু আর থাকল না। আমলাতন্ত্র শক্তিশালী হয়ে উঠল। সবচেয়ে মর্মান্তিক হলো, প্রকৃত রাজনীতিকের জন্য রাজনীতি করা কঠিন হয়ে পড়ল, কালো টাকার মালিকেরা এর একচেটিয়া দখল নিয়ে নিল। ঠিক পাকিস্তানের মতোই আবার একুশে, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল অসাম্প্রদায়িক মানবতা হয়ে উঠল রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের হাতিয়ার। বোঝা গেল, রাষ্ট্রের নীতি-আদর্শের বিষয়টি ঠিক করা না গেলে জাতীয় অগ্রগতি অর্জন ব্যাহত হবে সহজেই। এসব নিয়ে বিভ্রান্তির বিতর্ক সমাজকে বিভক্ত করে রাখবে এবং পর্যুদস্ত করে ছাড়বে। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান অসমাপ্ত কাজ হলো দেশটিকে নীতি-আদর্শে সঠিক অবস্থানে ফিরিয়ে আনা। মানুষের জন্য যেমন খাদ্য, স্বাস্থ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান মৌলিক চাহিদা; তেমনি রাষ্ট্রের জন্য এর মূলনীতি ও লক্ষ্যাদর্শ মৌলিক বিষয়, সমান গুরুত্বপূর্ণ। একটি ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক নীতি-আদর্শ অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী শাসন ও কর্তৃত্বপরায়ণ শোষণমূলক প্রশাসন কায়েম করে।

বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু-কন্যা কি রাষ্ট্রের নীতি-আদর্শের সংগ্রামের দিকে নিয়ে যেতে চাইছেন? মুক্তিযুদ্ধের আরব্ধ কাজ সম্পন্ন করতে চাইছেন? বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ, চিন্তার বিষয়।

বাংলাদেশের অধিকাংশ বুদ্ধিজীবী, শিল্পী-সাহিত্যিক, রাজনীতিক, সম্পাদক-সাংবাদিক তাঁদের কথায় ও লেখায় বড় দুই দল ও দুই নেত্রীর মধ্যে সমঝোতা ও সম্পর্কের ওপর জোর দিয়েছেন বরাবর। তাঁরা সবাই নিশ্চয়ই জানতেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের হোতাদের সহযোগিতা দিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়েছেন। সবাই নিশ্চয় দেখেছেন, জিয়া অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে জামায়াতকে পুনর্বাসিত করেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের পুরস্কৃত করেছেন। এ-ও সবাই দেখেছেন, তাঁর রাজনীতি ছিল ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিপরীতে প্রত্যাখ্যাত পাকিস্তানপন্থী ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক রাজনীতি। তাঁর আমলে ঠিক পাকিস্তানি কায়দায় রাজনীতি ও সংস্কৃতির অঙ্গনে একদিকে ধর্মান্ধতার জিগির উঠেছে, অন্যদিকে অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল শক্তি রাষ্ট্রীয় পীড়নের শিকার হয়েছে। জেনারেল জিয়া ও বিগম জিয়া উভয়েরই স্বাভাবিক মিত্র হয়েছে একাত্তরে দখলদার পাকিস্তানি শাসকদের দোসররা। এমন ভাবাও অন্যায় হবে না যে বেগম জিয়ার সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতা-সম্পর্ক গড়ার অর্থ হবে গোলাম আযম ও নিজামীর সঙ্গে সমঝোতা-সম্পর্ক করা। বিএনপির সঙ্গে বসা এবং চারদলীয় জোটের প্রধান শরিক জামায়াতের সঙ্গে বসার মধ্যে পার্থক্য থাকে না।

পঁচাত্তরের পর নব্বই পর্যন্ত দীর্ঘ ১৫ বছরের সামরিক স্বৈরশাসনের পটভূমিতে বিরোধী অবস্থানে বিএনপি-আওয়ামী লীগ দুটি দলই স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনরত গণতান্ত্রিক দলের মর্যাদা পেয়ে এসেছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষ তখন এই দুটি দলের দিকে তাকিয়েছে। আন্দোলনের ময়দানে দুই নেত্রীকে মানুষ একই কাতারে দেখতে পেয়ে আনন্দিত হয়েছিল। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির অবদানের তুলনায় অর্জন ছিল বেশি, তার ভেতরকার আদর্শিক স্বরূপ ঢাকা পড়ে গিয়েছিল এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগের পাশাপাশি তার ওপরও মানুষ আস্থা রেখেছিল। ১৯৯১-৯৫-এর বিএনপি আমল এবং ১৯৯৬-২০০০-এর আওয়ামী লীগ আমলে মানুষ এদের দক্ষতা-পারঙ্গমতা নিয়ে, বিশেষত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আন্তরিকতা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং ক্রমে আস্থা হারাতে থাকে। সত্যের খাতিরে বলা দরকার, তখন রাজনীতিবিমুখ মানুষের চোখে ও বিবেচনায় মনে হয়েছে, দুই দলের মধ্যে সমঝোতা-সম্পর্কের ব্যাপারে শেখ হাসিনা অনুদার, অসহিষ্ণু; তুলনায় বেগম জিয়া অনেক সময় নমনীয়, সহিষ্ণু। কিন্তু তাই বলে বেগম জিয়া যে নীতি-আদর্শের ক্ষেত্রে তাঁর কট্টর আপসহীন অবস্থান থেকে সরে এসেছেন, জামায়াত-জঙ্গিদের ছেড়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধু-তাজউদ্দীনকে স্বীকার করে নিচ্ছেন, তা নয়। বরং ২০০১ সালের বিজয়ের পর বিএনপি স্বরূপে আভির্ভূত হলো। হিন্দুদের দেশছাড়া করতে চাইল, আওয়ামী লীগকে কোণঠাসা করতে চাইল, ধর্মনিরপেক্ষতার বিপরীত শক্তি হিসেবে ধর্মান্ধ জঙ্গিবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতা দিল, অত্যন্ত বিতর্কিত সন্দেহজনক চরিত্রের লোকজনকে রাষ্ট্রে ও রাজনীতিতে প্রভাবশালী করে তুলল, একুশে টিভিসহ বাঙালি সংস্কৃতির প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানের বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়াল, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার স্থগিত করে রাখল এবং দেশে দুর্নীতি ও মাস্তানির রাজত্ব কায়েম করল।

আমার ধারণা, এই ভয়াবহ বিপজ্জনক রূপটি দেখার পর ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের বিজয়ের পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগও স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করতে চাইছে। এর মধ্যে ঘটে যাওয়া একটা পরিবর্তনের কথাও বলা দরকার। পঁচাত্তরের পর থেকে জিয়া-এরশাদের আমলে রাজনীতির চরম নেতিবাচক রূপই মানুষ দেখেছে। রাজনীতি ও মাস্তানি-দুর্নীতি, অস্ত্র ও কালো টাকা প্রায় সমার্থক হয়ে উঠেছিল। বাংলাদেশের অহংকার ছাত্ররাজনীতির দূষণ ও বিপর্যয় হয়েছে ব্যাপক। ফলে এই সময় থেকে তরুণ প্রজন্ম রাজনীতিবিমুখ হতে থাকে।

আমি বলব, রাজনীতিবিমুখতার এই ধারা ২০০৬ সাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। দুই বছরের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের অনেক সমালোচনার মধ্যেও আমি বলব, এ সময় বাংলাদেশের সিভিল সমাজ একটু থিতু হয়ে ভাবার সময় পেয়েছে। ছাত্র-তরুণেরা আবার রাষ্ট্রীয় যন্ত্রে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও তাঁর কথা শোনার অবকাশ পেয়েছে। তদুপরি তত্ত্বাবধায়ক সরকারটিই ছিল অসাম্প্রদায়িক, আধুনিক, বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধাশীল, ইতিহাসের প্রতি দায়বদ্ধ এবং গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকারে আন্তরিক। এ সময় প্রশাসন ছিল গতিশীল, দুর্নীতিবিরোধী। সবচেয়ে বড় কথা, বহুকাল পর একটি সরকারের সঙ্গে দেশের সিভিল সমাজের সহজ ভাববিনিময় সম্ভব হয়েছিল। এই দুই বছরে সমাজের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছিল। আর তাতে বহুকাল পর, প্রায় তিন দশকের ব্যবধানে তরুণসমাজ ও সিভিল সমাজ রাজনীতির বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ৩০ বছর পর যেন ইতিহাসের রথের চাকা তার পথ খুঁজে পাচ্ছে। তরুণেরা রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠল। বহুকাল পর আওয়ামী লীগ তরুণদের সমর্থন ফিরে পেল, বহুকাল পর যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের স্লোগানে তরুণসমাজ ও জনমানুষের সমর্থন মিলেছে।

মানুষ তার গৌরবময় ইতিহাসের অংশ হতে চায়, সেই মর্যাদার স্বাদ একবার পেলে তা আর ছাড়তে চায় না।

হ্যাঁ, সহজ একটা হিসাব মিলিয়ে দেওয়া যায় বটে যে মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার এই তো সময়। কিন্তু আমরা এ-ও বুঝি, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে যেমন বিপজ্জনক স্থলমাইন পুঁতে রাখা থাকে, তেমনি আদর্শবিপর্যস্ত দেশে জঙ্গি ও চরম আদর্শের বীজও ছড়িয়ে থাকবে। ষড়যন্ত্র অতীতে হয়েছে, আজও হতে পারে। পরাজিত শক্তির দোসররা অতীতে যেমন খেলেছে, আজও খেলতে পারে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক মহলের ভূমিকা বড় শক্তির স্বার্থের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় বলে এর কোনো স্থায়ী রূপ নেই। সেটাও চিন্তার বিষয়। সবকিছু সামলে শেখ হাসিনাকে এগোতে হবে। এর মধ্যে কঠিন একটি প্রতিপক্ষ হবে তাঁর নিজ দল, তাঁর ভেতরকার ঘুণে ধরা পুরোনো অংশ, নবজাগ্রত উচ্চাভিলাষী অংশ, বিত্ত ও ক্ষমতার প্রভাবে দূষিত অংশ এবং সর্বোপরি অতীতের মতো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষহীন অবস্থায় একদলীয় শাসনে আকৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা।

বাংলাদেশের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হলে আওয়ামী লীগের মধ্যে সহনশীল ও উদার মানবিকতা চর্চার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী শক্তিশালী বিরোধী দলের উত্থানকেও সহজ ও স্বাভাবিক করতে হবে। সামনের পথ রীতিমতো দুস্তর, তবে এর বিকল্প কি আছে?

প্রথম আলো, জানুয়ারি ৮, ২০১১।