আশ্চর্য ভাল লাগছে আমার এই কান্তিমান
প্রভাত। মনের ভেতর পূর্ব জন্মের বেদনার মত
ক্ষণে ক্ষণে ঝিলিক দিচ্ছে স্বপ্নের আভা।
বিশাল আকাশে অবারিত মুক্তি, বড় বড় মেঘ
দক্ষিণ সমুদ্রের দিকে ছুটে চলেছে… আকাশ গাঙের
দৃষ্টিশোভন চিত্রলেখা। তরুশীর্ষে শিশু রোদের
সোনালি ফোয়ারা, জলের মত তরল আলো
সূর্যের কলস উপচে ধারার ধারায় বেরিয়ে আসছে।
ঘাসের প্রাণে কোমল গভীর শিহরণ, পাখি
অবাক কথা কয়, প্রজাপতির পাখনায় গাঢ় রঙের
প্রলেপ, ফড়িঙের চোখে ক্ষুদে নক্ষত্রের দীপ্তি।
আমার চোখের সামনে তাপিয়ে ওঠছে- বেবাক জগত;
বড়ই মসৃণ সুরে আকাশ নিসর্গ ব্যেপে যেন
কোন গুণীজন অপার্থিব বেহালা বাজায়।
আজ আমি সম্পূর্ণ নির্ভার, এই পৃথিবী যেন
আত্মীয় বাড়ি, ক’দিন বেড়াতে এসেছি, চিনি চিনি
মনে হয়, তবু ঠিক চিনে ওঠতে পারিনি- এর গলি ঘুঁঞ্জি
অন্ধকারের জমাট রহস্য, প্রাণ পাতালের ক্ষুধা
চোর কুঠুরীর নির্মম ডাকাত।
আজ আমি পাখির মত স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছি
ডানায় আমার দুর্নিরীক্ষ গতি, মন উষ্ণতায় ছেয়ে গেছে
ভোরের রাঙা আলোর স্পর্শে ঠিক সেতারের মত
বেজে বেজে ওঠছি আমি।
কারা যেন এই পৃথিবীর রত্নভাণ্ডার লুট করে
সমস্ত মণি-কাঞ্চন কাঁচা আলোর চলাচল লাবণী স্রোতে
গুলিয়ে দিয়েছে। আলোর স্পন্দমান কণিকার
নিপুণ ঝঙ্কার বাতাসের শরীরে থরথর প্রেমের
প্রথম স্পর্শের মত কাঁপছে।
নিজের ভেতরে টের পাচ্ছি আমার মস্তক
হাওয়া ঠেলে উর্ধ্বদিকে কাঞ্চনজঙ্ঘার শিখরের
মত ওঠছে, আর ভোরের আলোক এলানো
কেশগুচ্ছে খেলা করছে। আপন মহত্ত্বের
ঔজ্জ্বল্যে তুষার ঢাকা ধবল গিরিশৃঙ্গের
মত ঝলমল করছি আমি।