এরোপ্লেনে

কোনো মানে নেই শুধু আলোয় হঠাৎ এক হওয়া,
বাঁচা না-বাঁচার চেয়ে চিরদিন বেশি-
কেউ আছে, কেউ নেই, কারো হাসি কারো কান্না ঐ
পবনে-পবনে মিশে উড়ে যায়।
বিদেশে শহরে এসে ক’দিনের আনন্দ সংসার,
চেনা হ’লো প্রতিবেশি,
চতুর্দিকে সে চেনার ছড়ায় আমেজ,
তার মধ্যে বার-বার সব-কিছু পেরিয়ে কেবলি
এক হওয়া মাথা নিচু ক’রে প্রাণে চাওয়া
-এই কি সে জীবনী যাপন।।

আয়ুঃক্ষণ মহাবিত্ত, প্রকাণ্ড নিরালা সময়ে,
ছায়াহীন ইস্পাতী দিগন্তে কিছু মায়া।
পর্দায়-পর্দায় রং লেগে যায় ক্ষণটুকু জুড়ে
তাকেই প্রাণের বলি একান্ত সময়;
নিচে তারি গাছ নদী
প্রিয়জন সে-মুহূর্তে চলে,
দোকানে কলেজে ট্রেনে সেইক্ষণে আয়ু
কী বোঝায় কিছুই জানি না-
শুধু সে-মুহূর্তে বাঁচি তোমার ভুবনে।।

কথা শেষ না হ’তেই
উড়েছে এ-প্লেন।
কথা কত স্তূপ হ’য়ে শাদা হ’য়ে আছে,
আছে নিচে চতুর্দিকে কাছে,
ব্যথার উত্তাপে,
মেঘ হ’য়ে।
আলোয় গলিয়ে কবে দেবব ফিরে তাকে
সূর্যের রাস্তায় যেতে সেই সব কথা-
বারান্দায় মাটির ঘরের ধারে,
রাস্তার ফুটন্ত বীথিপাশে;
কথার আবেশ যদি ছড়ায় ঘূর্ণিত শূন্যকায়,
তবু জেনো শেষ কথা বাকি ছিলো।।

কোথায় অদৃশ্য চোখ মনে যায়-আসে
কোথা থেকে আসে যায়।
দৃষ্টি খোলে মেঘ-কাটা যোজন নীলান্ত দূরে নিচে
-এরোপ্লেন হংস চলে পাখা মেলে-
প্রাণের রৌদ্রের ধরা, যেখানে সে গৃহকাজে
নিরন্ত আশ্চর্য বয় দরিদ্র সংসার।
বাগানে লোহার তারে কাপড় শুকোয়,
গাঁদাফুল ফুটেছে সোনার গুচ্ছ,
ব্যথায় প্রভাতী বাজে কঠোর কোমল রামকেলি
অশ্রুত সানাই-
আমাদেরি নিতান্ত আপন
কী আনন্দ দোলে দু-দিনের।।

চেনার গরম হাওয়া
বয়,
ফিরে আসে পুরোনো পৃথিবী
প্রাণের সময়।
উহু কী পাথুরে শীত ছিন্ন উর্ধ্বক্ষণে
নিঃসীমা অজ্ঞান মননে,
মনে পড়ে ফিরে এসে-
মৃত্যু থেকে নামি যেই বার-বার।।

তুষার তুলোর তলে বীজ, তার
পশ্চিমী বসন্তে দ্রুত ফিরে প্রাণ পায়,
অবলীন অপূর্ব ধারণ
নব কলেবরে এই প্রাণমন
অবিকল্প সমাধির ঈথরস্পন্দিত অবসানে,
কল্প-কল্প অবতরণিকা।।