দুই স্বপ্ন

“কেন দু-জনায় তবু ধরণীতে স্বচ্ছ অন্তরাল?”

“ডাঙায় আমার বাসা, দৈবী তুমি
শুভ্রের শুভ্রতা হ’য়ে এলে উঠে কান্না নীল জল থেকে
আমারই উদয়,
ওগো মৎস্যনারী-
শঙ্কিত তরঙ্গদোল তখনো সে নিদ্রা সমুদ্রের
ঘুমাঙ্কিত অতি ভোর লাগা,
ছলছল তটে তুমি ছুঁলে কি ছায়ার ব্যবধান
এসে মর্ত সংসারের সূর্যতায়?

আলাদা তোমায় খুঁজতে ঢেউয়ে-ঢেউয়ে ডুবেছি অতলে
ঘুলিয়ে তুলেছি জল কত ব্যর্থ আলোড়নে,
সুদীর্ঘ বিরহ তীব্রতায়;
তাই দুঃখ পেয়ে শান্তি দিতে
প্রাঞ্জল তরল মণি মিলন মুক্তার সৌধ ছেড়ে
কঠিন রোদ্দুরে প্রতিভাত
শাপভ্রষ্ট নিজে তুমি এসে এই দু-দিনের তীরে,
হঠাৎ হয়েছে বন্দী মধ্য-অজানায়-
মাটির রচিত গূঢ় স্বপ্নলয়ে।
দেখি তুমি শহরের পাথরে হয়েছে মূর্তিমতী
সমুদ্র যেখানে প্রান্ত লোকালয়ে জাগা।
শান্ত, ঘাড় বেঁকে চেয়ে আছ
কম্পিত কান্তারে,
যে-গভীরে দু-জনার বাসা সেইদিকে ফিরে,
অন্যমনা মৃদু এই জীবনের দ্বন্দ্ব ভুলে,
যদিও সংসারে নিলে আপন বাঁধন আমার।”

“গভীরের জল থেকে বিচ্ছেদের সুন্দর ধরায়
কেন দু-জনার হ’লো জীবনের বিদ্যময় দিন?”

“প্রকাণ্ড শহর চূড়া সবুজ তামার প্রাচীনতা
তুলে ধরে বিস্মিত বাতাসে অন্যতর,
ঝকঝকে এই দেশে সংসারের সহজতা ব’য়ে
ব্যস্ত মাধুরীর লয়ে চলে কত লোকে,
তারা মুক্ত মনে হয়।
বল্‌টিক সমুদ্র ফালি নগরীর বুকে ঢুকে-আসা,
জাহাজ মাস্তুল জালে রাস্তার ভিড়ের মধ্যে ঠেকে,
দূরের স্মরণী বয় পণ্যতায় আঁকাবাঁকা
ব্যস্ত দ্বীপের মধ্যে।
এও তো তোমার দেশ, মৎস্যনারী।
এইখানে বন্দী আমি, বন্দী তাই করেছি তোমাকে
জলরোল অনির্ণীত আহ্বান প্রচ্ছায়ে রক্তে দোলে,
তখন সহসা জানি মিলন অপার তলহীন,
বৃথা এই অকিঞ্চন অজস্র ঐশ্বর্য ধরণীর।

তবু এরি মধ্যে দিন যাবে,
দু-জনার ব্রত আজো বাকি;
মৎস্যনারী,
ধুলোর স্বর্গের দাম পূর্ণ শোধ হবে।
তারপর এ-দিনের দ্বিধা দ্রব হ’য়ে নিত্যজলে
পাবে কোন মণি-সৌধ মুক্তির প্রবালে গড়া শেষে
সংসার অভিন্ন যেখানে?”