নেবুরঙা শার্টপরা একটি মানুষ এসেছিলো
ঢালু মাটি মস্ত গাছ পেরিয়ে, নদীর ধার দিয়ে
ঘোড়া চ’ড়ে;
কী মনে লাগলো তার, ফিরে গিয়ে
নির্জন চড়াইয়ে এলো আরো দু-জনার সঙ্গে, ব’সে
গাছতলে খানিকক্ষণ তিনজন (স্ত্রী আর গাঁয়ের খুড়ো হবে)
থলি খুলে রুটি সব্জি খেলো, ঘোড়া দাঁড়ালো গা ঘ’ষে
তারপরে গলা তুলে ডেকে উঠলো চিঁহি-চিঁহি রবে।
ঠুকঠাক দিনে-দিনে কাঠ কাটা, বাড়ি তোলা, ভালোবেসেছিলো
ওরা এই জায়গা। আজ সেখানে একটি খুদে পাড়া
ড্রাগ-স্টোর, বিয়র্-হল্; মস্ত গাছ আজও খাড়া;
খুড়োর হদিশ নেই, শাদা অক্ষরে লেখা সিমেট্রিতে
একটা পাথরে জল-মোছা কার নাম, সেই স্ত্রীর,-
তারই সঙ্গে পুরুষের, বাইশ বছর পরে মারা যায়;
এক ছেলে নেভাডায়, অন্য ক্যারিবিয়ানের তীর
কোন-এক দ্বীপের শহরে থাকে। খটখট শব্দ ওটা কাঠবেড়ালির।
২
পোল্ (ইতালিয়ানের সংখ্যা পাঁচ) ভাঙা ইংরেজিতে
তর্ক করে একত্র তিনজনে, ওরাই এখানে বেশি সংখ্যায়;
উক্রেনের দুর্বৎসরে যুদ্ধের আগেই সিধে বল্টিমোরে
তারপরে ঘুরে-ঘুরে এলো সাতজন। চিনি-দানি থেকে
দু-চামচে চিনি নিয়ে কফি খায় রোগা যুবা, রেস্তরাঁয়
দেয়াল-কাগজ হল্দে, পেরেকের বহু দাগ, ডেকে
ওঠে সিমেন্ট (না সোডিয়াম) কারখানা সাইরেন জোরে
কাঁপিয়ে উপত্যকা- গ্রামের প্রধান নির্ভর ঐ ফ্যাক্টরি; ঘোরে
ঠাণ্ডা দুপুরে চিল,
খড় উঠে ঠেকে রকে, উচু জুতো প’রে
মেরুন-রঙের জামা ঐ যে মেয়েটি যায়, মুখে সুখ নেই,
কী করবে, জর্জিয়া থেকে বোন সে লিখেছে চ’লে যাবে
স্বামী-ছেলে ঘরে ফেলে- স্বামী একটু বেশি মদ খায়- পাবে
হলিউডে কোন চাক্রি তাই মনে ক’রে; ভাবে যেই
এর চোখে জল আসে।
দুটো মস্ত কুকুরের ঘেউঘেউ ডাকা গেটে
জেল-এর মতন বাড়ি, থাকে কারখানা-প্রভু স্মিথ্, স্টেটে
ডলার কুবের শ্রেষ্ঠ, কারখানা নানা খানে, কথা বলতে অন্য দৃষ্টি
চোখে ঘোরে,
টাক-মাথা, আপিসের যম, গ্রামের কিছুতে নেই, শিকাগোতে গাড়ি
নিজেই হাঁকিয়ে যায়, কিছুদিন থেকে ঘন-ঘন ট্রাকে ভ’রে
কী-সব জিনিস সব পাঠায় কোথায়। সন্ধ্যার ধুলোয় তাড়াতাড়ি
আজ বেলা নামলো রাঙা ব্যাপ্ত লাল,
“আনা,
ঘড়িতে দিয়েছো দম?” ঘড়িটা আসলে মৃত, ভুলেছে সময়, নানা
ধুকধুক্ পেরিয়ে আজকে, মধ্যে-মধ্যে তবু চলে। খাটে শুয়ে
আনার দিদিমা
বারো বছর ঐ গির্জের পাশের ঘরে; আনার বয়স দশ, নেই সীমা
উৎসাহ খুশির তার, মোটা নীল ফিতে চুলে বাঁধা, লাল গাল,
বাপের দোকানে সারাদিন কাজ করে, ভাই তার প্রত্যহ সকাল
সাতটায় সাইকেল চ’ড়ে চ’লে যায়, পাঁচ মাইল দূরে বালি-পথে
ফিলিং স্টেশনে, খবর এনেছে কাল নতুন প্রকাণ্ড বাঁধ হবে
এই দিকে, সিসি-আইসিস্ দুটো নদী বেঁধে। দূরে কোন
জায়গায় তবে
ইট বাঁধা বহু গ্রাম একত্র শহরে গেঁথে, কোনোমতে
থাকবে বহুলোক। এই গ্রাম
তাহ’লে
উঠে যাবে।।