এক, দুই, তিন-
ঊর্ধ্বতর হিমালয়ে ধূম্র বরফের মেরুলোকে
পাথর-হিমের খাড়া পাহাড়ের গায়ে সিঁড়ি কেটে
যারা ওঠে পরে-পরে উত্তুঙ্গ শীর্ষের দেয়ালে
প্রত্যেকেই তারা রয় একত্র একাকী-
প্রতি পদে পথ চিরে শুভ্র-ভাঙা মানস কুঠারে
যাচে পৃথকের উঁচু পৌঁছনো প্রসাদ জনে-জনে
যেখানে সবারে দেন মৌন ধ্যানে মূর্তিমতী
গিরি অন্নপূর্ণা তাঁর জ্যোতির্ময়ী সর্বোত্তম দান
আপন-পারের উত্তমতা;
আসঙ্গের যে-সংগীত কানের চেতনে পাহাড়িরা
পায় একেবারে স্তব্ধতায়
কিংবা দড়ি-ছোঁয়া ছায়া সাহচর্য চেতনায় লীন,
সব তার সংসৰ্গতা অনাদি আদিম নীলালোকে
মিশে হয় অনিঃশেষ উজ্জ্বল নির্মল তুষারের।
শৈল অভিযান, তবু, কোথায় একের শিঙা বাজে,
মজ্জায় শরীরে বেঁকে প্রত্যেকের ওঠা বোঝা বেয়ে,
একাকীর পায়ে গুনে কোনোমতে, এক দুই তিন।।
সমবায় নেই, যেই ঝোড়ো অরণ্যের মর্মে চ’লে
শিল্পের তন্ময়ী গুরু বেঠোভেন শব্দধ্যানে একা
তর্জমা করেন সৃষ্টি মগজের সংগীতের ঝড়ে
অসম সুষম এক প্রকাণ্ড একক সিম্ফনিতে;
সেখানে বহুর পার, জর্মানির ঐশ্বর্য সংস্কৃতি
ভুলে-যাওয়া ব্যাকরণ, ধ্বনির অগম তলে-
যেমন সমস্ত ভুলে নীহারিকা লোকে তারা-গামী
অঙ্কের সিঁড়িতে উঠে জটিল শূন্যের আরো শেষে
দেখে দূর অতন্দ্ৰিত পারে
জ্বলজ্বল অ্যাণ্ড্রোমিডা,-
আদি অন্ত নির্নিমেষ শুধু মহাবিশ্বে প্রকাশিত
অন্য সৌর জগতের জ্যোতি;
ব্যাপ্ত এক; সব সিঁড়ি, বীক্ষণের ক্রিয়া
সে-মুহূর্তে স’রে যায় প্রক্রিয়ার পারে:
অনন্তকে শোনা আর অনন্তকে দেখা,
অন্তরায় নেই কোনো জাগৃতির,
একা আর এক সম্মুখীন।।
প্রাণে-প্রাণে মহাজ্যোতি প্রেমে জ্বেলে একা চলতে হয়,
হয়তো বা পাশাপাশি, হয়তো বা দূরে;-
অত্যন্ত নিবিড় সেই সঙ্গ যারা জানে নিয়ে যেতে
নির্বাণ মাধুরী পারে,
তাদের সে একোত্তম শূন্যচারী অন্তহীনতার
পরিণয় জানবে না জগৎ;
হেসে সেই মুক্তি দিয়ে, মুক্তি নিয়ে, সহচরী।
না বুঝুক এ-সংসার, শোনে যারা ধ্যানের দুন্দুভি
তাদের যে ভিন্ন পথ: তাদের সান্নিধ্য এককতা,
গঙ্গাধারা গঙ্গোত্রীর উজানে পৌঁছিয়ে তাঁরা এক
শিবনেত্ৰতলে রাত্রিদিন।
আবার সংসার খেতে, ফেরি-ঘাটে, সাঁকো-তল দিয়ে
কখনো বা যুগ্মতায়, কভু শূন্য মাঠে,
একই তীর্থ যারা বুকে পায়
সংগমের বিশ্বাতীত গহন সন্ধানী,
অনন্ত রাগিণী সেই অলক্ষ্য সমুদ্র পারমিতা
-নয় বহু ভিড়ে হারা, নয় আঁধি
অলগ্ন সত্তায় তৈরি বাসনার-
আনন্দবর্ণিত স্বচ্ছতায়
মেলে তাই সর্ব বাধাহীন বারে-বারে।।