সর্বজন বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে চলবে?

আমরা শিক্ষার্থী থাকাকালে বিশ্ববিদ্যালয় বলতে এক ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ই বোঝাত। গত দেড় দশকে দেশে অসংখ্য ব্যক্তি বা গোষ্ঠীমালিকানাধীন বাণিজ্যিক (প্রাইভেট) বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, এর ফলে আমাদের চেনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম দাঁড়িয়েছে ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়’। এর বাংলা নাম হিসেবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বলেন অনেকে। সরকারও সেভাবেই এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দেখতে ভালোবাসে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ধারণার সঙ্গে এই নাম মেলে না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মানে হলো এটি সমাজের, সর্বজনের, সব মানুষের আগ্রহী ও মেধাবী সন্তানদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের দায়িত্ব গ্রহণকারী প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা। অর্থবিত্ত বা ক্ষমতা নয়, মেধাই যাতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পথে একমাত্র নির্ধারক হয়, তা নিশ্চিত করে সমাজে উচ্চশিক্ষার পথ প্রশস্ত ও নিশ্চিত করাই এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য হওয়ার কথা।

সরকারের অর্থ বলে কিছু নেই, সবই জনগণের অর্থ। সরকারের দায়িত্ব তাই জনগণের অর্থ জনগণের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য ব্যয় করা। কোনোভাবেই সরকার এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক নয়; মালিক সমাজ, সমাজের সর্বজন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনও এমন কিছু করতে পারে না, যা সর্বজনের শিক্ষার ক্ষেত্রটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে কিংবা তার সুযোগ সংকুচিত হয়। সরকার বা মন্ত্রণালয়কে খুশি করা বা তাদের মনমতো চলা নয়, বিশ্ববিদ্যালয় চলতে হবে ‘সর্বজনের মালিকানা, কর্তৃত্ব ও শিক্ষার অধিকার’ নিশ্চিত করার নীতি কেন্দ্রে রেখে। ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, ল্যাটিন আমেরিকার বহু দেশ সেভাবেই এসব বিশ্ববিদ্যালয় দাঁড় করিয়েছে। এর পক্ষেই বহু দেশের জনগণ এখন রাস্তায়।

‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়’ বলতে তাই যে ধরনের প্রতিষ্ঠান বোঝায়, তাতে বাংলায় একে যথাযথভাবে উপস্থাপন করার জন্য আমি এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রস্তাব করতে চাই ‘সর্বজন বিশ্ববিদ্যালয়’। এই পরিচয় পরিষ্কার করা শুধু শব্দের ব্যাপার নয়, নিজের সম্পদকে নিজে চিহ্নিত করে তার মালিকানা নিশ্চিত করায় সর্বজনের সক্রিয়তার জন্যই তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, সর্বজনের বিশ্ববিদ্যালয়ই শুধু নয়, সর্বজনের চিকিৎসা, পানি, খনিজ সম্পদসহ সর্বজনের সবই এখন দখলদারদের থাবার নিচে। এই থাবা মোকাবিলা তাই আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন।

এই থাবা হঠাৎ একটি সরকারের আমলে কতিপয় ব্যক্তির দোষে দুষ্ট ব্যাপার শুধু নয়। গত কয়েক দশকে সরকার-নির্বিশেষে যে উন্নয়ন দর্শন বাংলাদেশে আধিপত্য বিস্তার করেছে, তারই সাক্ষাৎ ফল এই থাবার সম্প্রসারণ। এই উন্নয়ন দর্শনের সারকথা হলো সর্বজন প্রতিষ্ঠান, সর্বজন সম্পত্তি দ্রুত ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পত্তি ও বাণিজ্যিক মুনাফাকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা। এই দর্শন রেখেঢেকে এটাই নিশ্চিত করতে চায় যে সর্বজনের সম্পদে সর্বজনের অধিকার থাকবে না, তাদের কাজে লাগবে না, সেগুলো ব্যবহূত হবে কতিপয় ব্যক্তির মুনাফার পাহাড় তৈরিতে। সর্বজন সম্পত্তি যেমন: নদীনালা, খাল-বিল, জলাশয়, খোলা মাঠ ব্যক্তির দখলে যাওয়া, বনজঙ্গল, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুতের ওপর বহুজাতিক পুঁজির মালিকানা, দেশি-বিদেশি মুনাফাকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়া, পরিকল্পিতভাবে সর্বজন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের পঙ্গু অবস্থার সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যিক খাত হিসেবে শিক্ষা ও চিকিৎসার বিস্তার ইত্যাদি বর্তমান উন্নয়ন দর্শন ও রাজনীতিরই অবদান। এগুলো তাই এমনি এমনি কিছু দখলদারের দাপট থেকেই ঘটেনি, রাষ্ট্রীয় নীতিই তাই। সরকার বদলে এসব নীতির পরিবর্তন হয়নি। এসব নীতি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়েই সর্বস্তরে দখলদারদের বিস্তার ঘটেছে। এসব রাষ্ট্রীয় নীতির আন্তর্জাতিক মাত্রা আছে, সুবিধাভোগীদের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পক্ষ আছে। এসব রাষ্ট্রীয় নীতি বৈশ্বিকভাবে প্রবল নয়া রক্ষণশীল (বা নয়া উদারতাবাদী বলে পরিচিত) নীতির অংশ।

প্রান্তস্থ দেশগুলোতে এই নীতির প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও সহযোগী নানা সংস্থা সদা সক্রিয়। বিভিন্ন খাতে উন্নয়ন নামে প্রণীত তাদের নীতির লক্ষ্যই তা-ই। কিছুদিন আগেই একটি শিক্ষানীতি সরকার অনুমোদন করেছে। এত দিন দেশে কোনো শিক্ষানীতি ছিল না, শিক্ষা খাত চলেছে বিভিন্ন খণ্ড খণ্ড নির্দেশনার মাধ্যমে। এই খণ্ড খণ্ড নির্দেশনা এসেছে অখণ্ড নীতির মধ্য থেকে। মাধ্যমিক শিক্ষার এডিবির প্রকল্প তার একটি উদাহরণ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষেত্রে এ রকম একটি ছাতা-কর্মসূচি হচ্ছে বিশ্বব্যাংক সমর্থিত ২০ বছরব্যাপী কৌশলপত্র। শিক্ষানীতি এই ধারাবাহিকতা খর্ব করেনি।

এই কৌশলপত্রের মূল মনোযোগ হচ্ছে সর্বজন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কাঠামো পরিবর্তন করে তাকে বাজার অনুকূল করা, শিক্ষার্থীদের আবাসিক ব্যবস্থা ক্রমে সংকুচিত করা, বেতন ও ফি ইত্যাদি ধীরে ধীরে এমনভাবে বৃদ্ধি করা, যাতে এসব প্রতিষ্ঠানের খরচের বড় অংশ শিক্ষার্থীদের থেকেই গ্রহণ করা যায়। অর্থাৎ ক্রমে ক্রমে সর্বজন বিশ্ববিদ্যালয় যেন বাণিজ্যিক মুনাফাসন্ধানী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমগোত্রীয় হয়। এই নীতির ভিত্তি প্রথম সুসংগঠিতভাবে প্রকাশিত হয়েছে ২০০০ সালে তিন খণ্ডে বিশ্বব্যাংকের এডুকেশন সেক্টর রিভিউতে। এখানে স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে, ‘প্রতিরোধ সামলানোর জন্য খুব কায়দা করে এমনভাবে বেতন-ফি বাড়াতে হবে, যাতে একপর্যায়ে পুরো ব্যয় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই সংগ্রহ করা যায়।’ এর অর্থ হলো, নামে সর্বজন বিশ্ববিদ্যালয় হলেও ক্রমে এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে, যাতে মেধা নয়, অর্থবিত্তই উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের প্রধান নিয়ামক হবে।

যাঁরা এ দেশেরই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান বা সাবেক শিক্ষক হিসেবে এসব নীতি প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত কিংবা এগুলোর পক্ষে ওকালতি করেন,্র আমি জানি না, তাঁদের কয়জন বাজারদরে শিক্ষা কিনে এই পর্যন্ত আসতে পারতেন, কিংবা বর্তমানের যাঁরা প্রকৌশলী, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী, তাঁরা কয়জন উচ্চশিক্ষা সমাপ্ত করতে পারতেন? নিজের বেলায় বলতে পারি, আমি পারতাম না। সর্বজন শিক্ষার দায় রাষ্ট্রকে এ জন্যই দেওয়া হয়, যাতে রাষ্ট্র জনগণের অর্থ ব্যয় করে তার মধ্য দিয়ে জনগণের শিক্ষার অধিকার শুধু নয়, সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা নিশ্চিত করে, জনশক্তি তৈরি করে।

টাকার অভাবের যুক্তি দেখিয়ে দেশীয়-আন্তর্জাতিক নীতি প্রণেতারা বাণিজ্যিকীকরণের ধারা জোরদার করছেন। দেশের ৩৫টি সর্বজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১-১২ অর্থবছরের জন্য বাজেট ধরা হয়েছে এক হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্মুক্ত ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও অন্তর্ভুক্ত। এই টাকা খরচ হয় দেশের প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থীর পেছনে। অথচ এর পাঁচ গুণ অর্থ সরকার প্রতিবছর অপচয় করে বিদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে করা অপ্রয়োজনীয় চুক্তির কারণে, অনেক গুণ বেশি দামে নিজেদের গ্যাস কেনার কারণে, বিদ্যুৎ কেনার কারণে, যার পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি করতে কোনো কার্পণ্য দেখা যায় না। বিশ্বব্যাংকীয় দর্শন শিক্ষার জন্য প্রথম ব্যয়কে বাহুল্য মনে করে, দ্বিতীয়টি তাদের সমর্থনপুষ্ট, তারা তাকে উন্নয়নের অংশ মনে করে। সেটাই শিরোধার্য বিবেচনা করেন আমাদের অনেক শিক্ষিত মানুষ!

অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, সব ধরনের ব্যয় বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বেতন ও ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কীভাবে যৌক্তিক হয়? বিচ্ছিন্নভাবে এই প্রশ্নটি ঠিক। কিন্তু শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ বা প্রশ্ন যদি কেউ মনোযোগ দিয়ে শোনেন, তাহলে দেখবেন তাঁদের উদ্বেগ্রও অনাস্থার একটি বৃহত্তর কারণ ও পরিপ্রেক্ষিত আছে। উদ্বেগটি সর্বজন বিশ্ববিদ্যালয়কে ক্রমান্বয়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পরিচালনার ক্ষমতাবান উন্নয়ন দর্শনকে নিয়ে, দুর্নীতি ও অপচয় নিয়ে।

বর্তমানে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে, সেগুলোতে বেতন ও ফি পুরোনো বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে বেশি। পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতন না বাড়লেও নানা রকম ফি এবং বিভাগীয় চাঁদা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্ষম না হলেও নতুন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনি কাঠামোর মধ্যেই বাণিজ্যিকীকরণের নীতিগত অবস্থান ঘোষিত হয়েছে। গত কিছুদিনে চট্টগ্রাম বা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন তাই তাঁদের একার নয়। শিক্ষা ও চিকিৎসাকে ক্রমে বাণিজ্য ও মুনাফার উপাদানে পরিণত করার নীতি ও দর্শনের প্রভাব সর্বজন বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা হাসপাতালগুলোর অভ্যন্তরে আরও অনেক বিষময় প্রবণতা তৈরি করেছে। বাণিজ্য, মুনাফা বা টাকার উন্মাদনা সমাজের সুবিধাভোগী সমাজের অন্যান্য অংশের মতো এখানেও ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। বাজার থেকে শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সবকিছু বর্ধিত দামে কেনার বাধ্যবাধকতা এই পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও চিকিৎসকদের বেতন সুযোগ-সুবিধা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় কম। কিন্তু বাণিজ্যিক বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা ক্লিনিক/হাসপাতাল গড়ে উঠেছে, টিকে আছে, কাজ করছে সর্বজন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বিশেষজ্ঞদের দিয়েই। বেতন যেখানে বেশি, বাজারের টান সেদিকেই। কিন্তু সর্বজন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাপ্য সময় এমনকি অবকাঠামো অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্যিকীকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রবেশ করছে। কোনো কোনো সর্বজন বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের প্রাঙ্গণেই ভিন্ন শিফট করে বাণিজ্যিক তৎপরতায় নিয়োজিত হয়েছে। অর্থ মুনাফামুখী তৎপরতাই এখন প্রাধান্যে। শিক্ষা ও শিক্ষার্থীরা এর শিকার।

এখানেই শেষ হয়নি। টাকা কামানোর সব রকম তৎপরতা এখন দিন দিন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি থেকে পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসও অর্থ উপার্জনের মাধ্যম। অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রের মতো নিয়োগ-বাণিজ্যও এসব প্রতিষ্ঠানকে গ্রাস করতে যাচ্ছে।

সর্বজন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসন ক্রমেই হয়ে উঠেছে সরকারের মন্ত্রণালয়ের সম্প্রসারিত হস্ত। চারদলীয় জোট সরকারের সময় ১৮৭৩ সালের আইন ব্যবহার করে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচিত উপাচার্য অপসারণ করা হয়, বসানো হয় দলীয় লোককে। বর্তমানে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আর নির্বাচিত উপাচার্য নেই। সবাই সরকার-নিযুক্ত। কাজেই তাঁদের জবাবদিহি করার একমাত্র স্থান মন্ত্রণালয় কিংবা দলের নেতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও নন।

পতন অবিরাম, ক্রমেই অধিকতর গতিপ্রাপ্ত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে স্থান পাওয়ার জন্য সরকারি দলের পূর্ণ আনুগত্য এখন ন্যূনতম শর্ত বটেই, কিন্তু যথেষ্ট শর্ত নয়। বহু সরকারি দলের সমর্থক যোগ্য ব্যক্তি আছেন, কিন্তু তাঁরা পরীক্ষায় ফেল করেন। যথেষ্ট শর্ত পূরণের জন্য ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী ও বাণিজ্যিক তৎপরতা থেকে সমর্থনপ্রাপ্তি ও বিনিময়ে তাদের পৃষ্ঠপোষকতার নিশ্চয়তা দান আবশ্যক শর্ত। ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ উচ্চতর পদে নিয়োগেও সরকারি ছাত্র সংগঠনের সবুজসংকেত প্রয়োজন হয়। সুতরাং এসব ‘ছাত্রনেতা’কে পক্ষে রাখার জন্য তাঁদের অন্যায়-অত্যাচারের প্রতি সস্নেহ দৃষ্টি ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রশাসকদের নিয়মিত কাজ হয়ে দাঁড়ায়। কর্মচারী, কর্মকর্তা, শিক্ষক নিয়োগ এই দুষ্টচক্রের মধ্য দিয়েই ঘটে। পরিস্থিতি দেখে মনে হয় যে সরকার সর্বজনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিবেচনা করে তাদের অযোগ্য দলীয় ক্যাডার ও সমর্থকদের এমপ্লয়মেন্ট ও টাকা কামানোর ক্ষেত্র হিসেবে। শিক্ষকতায় একটি ভুল নিয়োগ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কত বড় বোঝা হতে পারে, সমাজের কতগুলো প্রজন্ম একটি ভুল নিয়োগের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা অর্থ আর ক্ষমতার প্রলোভনে মত্ত ব্যক্তিদের কীভাবে বোঝানো সম্ভব?

দেশ, সম্পদ, প্রতিষ্ঠানকে লুটেরাদের দখলমুক্ত করে ৯৯ শতাংশ মানুষের মালিকানা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, স্পেন, গ্রিস, ভারতসহ বহু দেশে ক্রমবর্ধমান। বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদে জনগণের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, ভূমি রক্ষার আন্দোলন, সর্বজন শিক্ষাকে বাণিজ্যের থাবা থেকে রক্ষার আন্দোলনও এই চিন্তাকেই ধারণ করে। শিক্ষা, চিকিৎসা, পানিসহ সম্পদের ওপর নিজের মালিকানা ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সজাগ ও সোচ্চার না হলে সামনে বিপদ আরও বাড়বে সর্বজনেরই।

(লিখাটি দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিলো অক্টোবর ৭, ২০১১ সালে।)