এসেছে জীবন-সন্ধ্যা, জানি,
ফুটিয়াছে ম্লানছায়া, নিভে গেছে আলোকের
শেষ রেখা, তাও আজ মানি।
তবু- তবু শুধাই তোমায়
ভালো কি গো বাস না আমায়?
এ নহে প্রথম দেখা- জনমে জনমে,
যুগে যুগে পরিচয়; সকল ভুবনে-
তোমারে পেয়েছি বারে বারে;
আমারই প্রাণের টানে পড়িয়াছ ধরা
জীবনের এ পারে ও-পারে।
ফুল হয়ে ফুটিনু যে দিন-
আমার পাতার ঘরে গন্ধ হয়ে ছিলে তুমি
মনে পড়ে সেই শুভ দিন।
তুমি তরু- আমি ছিনু লতা,
অফুরন্ত তব প্রেম-কথা
বাতাস কহিত আসি কাণে কাণে মোর,
শিহরি’ উঠিত দেহ পুলক-বিভোর।
সুখে দুঃখে ধরণীর মাঝে
বাঁধিয়াছি খেলা ঘর তোমায় আমায়
কত বার নব নব সাজে।
তুমি আলো- আমি ছিনু ছায়া,
সাথে সাথে থাকিতাম সারা নিশি দিনমান
আমারে ফুটাত তব মায়া।
আমি বাঁশী- তুমি ছিলে সুর,
মুরছিয়া পড়িতে মধুর
প্রভাতে শিশির সিক্ত দুর্ব্বাদল ‘পরে,
তটিনীর কূলে কূলে বনে বনান্তরে।
তুমি বুঝি ভুলে গেছ সব!
পাষাণের লেখা সম আমার পরাণে
জাগে সেই স্মৃতির গৌরব।
আমি ছিনু সাগরের বেলা
উন্মত্ত তরঙ্গ তুমি- কি গভীর প্রেমোচ্ছ্বাস!
ভুলি নাই তোমার সে খেলা।
মেঘ হয়ে ভাসি নীলাকাশে,
ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিকাশে
পেয়েছিনু তোমারেই- ভাবি আমি তাই
সে প্রেম তোমার বুকে আছে কিবা নাই!
আজি এই ম্লান মৌন সাঁঝে
সে সব পুরাণো কথা, এ জীবন ভরি,
ব্যথারূপে সুর হয়ে বাজে।
এ ব্যথা যে বুঝাবার নয়!
বিদায়-ব্যাকুল মন চাহিছে শুধুই আজ
শেষ বার তব পরাজয়।
তাই আজ শুধাই তোমায়
মোরি সাথে আসিবে কি অনন্তের পথে-
ভালো কি গো বাস না আমায়?