বেয়াড়া প্রশ্ন।
করোনার কালবেলায় নানাবিধ সাবধানতা, হিতে বিপরীত না হয়, তাই নিয়ে দিনরাত গুজরান।
একটু কাশি হলে, হাঁচি হলে, গলা খুশ-খুশ করলে, এই বুঝি অক্কা!
ঘরবন্দি, তায় কাজও বেড়েছে। থালাবাটি দুইবার ধোয়া,খাবার আগে, খাবার পরে। এক জামাপ্যান্ট দুইবার পরা চলবে না।
সকালবিকেলে স্নান। মেঝে, দরজা- জানালা পরিষ্কার। খড় কুটো ধরলেই হাত ধোয়া, সাবান দিয়ে, কুড়ি সেকেন্ড। গরমজলে। গৃহাঙ্গনে পড়ে থাকা মানেই মেজাজ তিরিক্ষে, পরন্ত খেয়েদেয়ে ভুঁড়ি, ঘুম, আলস্য। মাথার কোষ অচল। ‘আমার পরান যাহা চায়’, তা হয়ে ওঠে না। করোনার হরেক মাহাত্ন্য। এর মধ্যে কবিতাপাঠ? কী হয় কবিতা পড়ে? মানসিক উন্নতি? বোধের প্রসার? আত্নার তৃপ্তি? বাজে কথা। কবিরা খুব ইনিয়েবিনিয়ে, সাজিয়েগুছিয়ে মিথ্যেজাল তৈরি করেন। ওই ফাঁদে যে পড়েছে, মাকড়সা পেঁচিয়ে-পেঁচিয়ে এমনভাবেই রক্ত চুষে খায়, জ্যান্ত প্রাণী টেরও পায় না।
কবিতা কে পড়ে আজকাল? পাগল ছাড়া? পৃথিবীজুড়ে কবিতাপাঠের ল্যাঠা চুকে গেছে, বা, যাচ্ছে। পৃথিবীর অবস্থা করুণ, সঙ্গীন। সামাজিক, রাজনৈতিক, মানসিক অবক্ষয়। চারদিকে অর্থনৈতিক ধস। জাতিগত, বর্ণগত বিদ্বেষ বাড়ন্ত, ধর্মের গাঁজাখুরি, আষ্ফালন, মিথ্যাচারিতা রাষ্ট্রীয় মদতে পল্লবিত। শান্তির বালাই নেই। অশান্তির মূলে ধর্ম। নষ্টের গোড়া। যতদিন ধর্ম থাকবে বিপদ পদে-পদে।
অন্নদাশঙ্কর রায় বলেছেন, ‘আকাশে আর যাই থাক, স্বর্গ-নরক নেই।’ আসমানের সাতটি গ্রহের তিনটি ইতোমধ্যেই কব্জায়, স্বর্গ-নরকের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। যাবেও না। না যাক, মোল্লাপুরতের গালগপ্পো চলছে, চলবে। বাদ দিলে ব্যবসা চলবে কেন? রাষ্ট্রও এই ব্যবসায় জড়িত।
লক্ষ করছি,ধর্মআফিমের বাজার আগের চেয়ে রমরমা। আফিম, ড্রাগস বেহুঁশ করে, নিজস্বতা হারায়, বোধবুদ্ধি লোপ পায়, মহামতি মার্ক্স সতর্ক করেছিলেন, মাও সে দং ঝেঁটিয়ে বিদেয় করতে দ্বিধা করেননি। যদিও অসফল।
যে নারী পরপুরুষ দেখবে না, এই অছিলায় বোরখা পরে, বোরখার ভিতর থেকে নওজোয়ান, সুঠাম, তাগড়া, হি-ম্যান দ্যাখে, তার যৌনলালসা শতগুণ। খামচানি, আত্নরতি ভয়ঙ্কর। ইন্টারনেটে পর্নোও দ্যাখে।
বলছিলুম কবিতাপাঠের কথা। কর্পোরেট জগতে আমাদের বাস। সকালে উঠেই ভাবি, চাকরি আছে তো? ধমনী ঠিক আছে তো? গতকাল যে জিনিসের দাম ছিল নাগালে, আজ আছে কী? সবকিছুর দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে, বাঁচার পথ, ঘরদুয়ার বন্ধ। সন্ধ্যার আগেই ভাবনা, রাতের কালো চেহারা আর কত ঘন? দিনের সূর্য দেখবো কী?
সমস্যা সংকুল মানুষ, এর মধ্যে কবিতাপাঠ বিলাসিতা নয় কী?
কবিদের কবি বদল্যারের কবিতা এখন ক’জন পড়ে? গ্যোয়েটে-শিলারের কবিতা? শেকসপিয়রের কবিতা? কালিদাসের কবিতা? কবিতার দালাল এলিয়টের কবিতা? বাংলায় (দুইবাংলায়) রবীন্দ্রনাথের সব কাব্যগ্রন্থ নয়, পাঠক ‘সঞ্চয়িতা’ ঘরে রাখে, সাজিয়ে। লোক দেখানো। পড়ে কী? হালে জীবনানন্দের দুই-একটি বই।
মনে পড়ছে, কলকাতায় একজন ব্যবসায়ীর বাড়িতে জীবনানন্দের কাব্যসংগ্রহ দেখে আনন্দিত, প্রসঙ্গক্রমে বলি, কার্তিকের সন্ধ্যায় আপনার আতিথ্যে ধনী, জীবনানন্দের ‘কার্তিকের ভোরবেলা’ কতবার পড়েছেন? আঁতকে ওঠেন। ‘এই নামে জীবনানন্দের কবিতা আছে? পড়ি নি’। পড়ে শোনাই।