নিজস্ব মানুষ

তাতে কি, পুনর্বার জলে নেমে শুদ্ধ কর গা
যে গন্ধময় পাপ করেছ ধারণ
না হয় নামলেই এই শীতে
সমস্তই ধুয়ে যাবে জলের তরলতায়- বলে

আমার সুজন মিশে গেল হাওয়ার গভীরে
চারদিকে সকালের নিবিড় কুয়াশা
পাখিও জাগেনি তখন
অন্ধকার কেবল ছায়া-ছায়া

আমি সেই জলের উদরে পা রাখতেই
কনকনে ঠাণ্ডা এক ঘিরে ধরল শরীর
তাড়াতাড়ি উঠে পড়লাম তীরে

তারপর হাঁটতে হাঁটতে আমিও চললাম শহরে
শহরের এক প্রান্তে এসে যখন দাঁড়িয়েছি
দেখলাম, আমার সুজন মিশে গেল মানুষের ভীড়ে

প্রাণপণে ডাকলাম যেন না-শোনার ভানে হাঁটতে থাকলো দ্রুত
আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেটে শেষ টান দিচ্ছি
দেখি, একটি বাস এসে দাঁড়াল আমার কাছে-
আমি তাঁর হাতল ধরে উঠতে চাইলাম-
মানুষগুলো ঠেলে দিল মাটিতে

পুনরায় আমি হাঁটতে লাগলাম
হাঁটতে হাঁটতে একটি রাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছি
সবাই নাকে আঙুল চেপে চলে গেল-
আমি বুঝতে চেষ্টা করলাম
মানুষের কিসে এই অনীহা!

মনে পড়ল সুজনের কথা-
“যে গন্ধময় পাপ করেছ ধারণ-
না হয় নামিলেই এই শীতে
সমস্তই ধুয়ে যাবে জলের তরলতায়!”

আমি আবার হাঁটতে হাঁটতে নিজের ঘরে ফিরে এলাম
দরজায় টোকা দিতেই ভেতর থেকে শব্দ এলো
‘কে’?
বললাম
‘খোলো’
খুলে গেল বন্ধ কপাট
ভিতরে ঢুকতেই নির্দ্ধিধায় কাছে এলে বাসন্তী
শরীরে হাত রেখেই বলে উঠলো
“ঘেমে দেখছি অস্থির হয়ে গেছ”

বাসন্তী তখন জামার বোতাম খুলে, সামনে বসে, মাথায় হাত
বুলাতে বুলাতে
বাতাস দিতে থাকলো-
আমিই সেই বাতাসে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছি

তারপর এক সময় জেগে দেখি
বাসন্তীর মুখখানি পড়ে আছে আমার বুকের উপর।

৩/১০/১৯৭২