উত্তর চাই, জাহিদ

যত দিন যাচ্ছে, কেবলি
মুখোশ পাল্টে নিচ্ছি, ক্রমাগত
পাল্টে যাচ্ছে নামগুলো-
মনে হয়, আমি আর সেই আগের আমি নেই;
দ্রুত যাচ্ছি ধসে,
কোথায় যাচ্ছি; তাও অজানা।

জাহিদ, শুধু তোমার কিংবা আমার কথা নয়; আমি
গোটা দেশের কথাই বলতে চাই।

দেশের প্রসঙ্গেই আমার বারবার মনে হয়
কী করে একটি জাতি
মেরুদণ্ডহীন হয়ে গেল।


যারা গণতন্ত্রের কথা বলছেন,
আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না
দেশকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়ে,
মানুষের বাঁচবার অধিকার ও স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে
একনায়কতন্ত্রের মাধ্যমে
কী করে গণতন্ত্র সম্ভব?
-অবশ্য, প্লেটোর কথাটাও আমি ভুলছি না:
“মিথ্যা বলার অধিকার কেবল শাসকের, আর
সবই রাজকীয় মিথ্যা।”

জাহিদ, নিশ্চয় তোমার রিপাবলিকের
কথাগুলো মনে আছে:
“শাসিতের পক্ষে শাসকের মান্য করা কি ধর্ম”?

ভেবে দ্যাখো: “টেকোমাথা আর সচুল মাথার কাজ
সত্যিই কি ভিন্ন, কখনো হয়েছে?
তোমার দক্ষতার সাথে, আমার
বিনিময় চলে না বন্ধু; কিন্তু,
অভিভাবকদের বিবাহ উৎসবে আজ
পুত্রকন্যাই অতিথি!”


জাহিদ, তোমার চারপাশে লক্ষ মানুষের
ভিড়; দ্যাখো
প্রত্যেকে তোমার দেশভাই, প্রত্যেকে
প্রতিকার চায়, প্রত্যেকে তোমার
মুখের দিকে চেয়ে আছে,-

কেননা, এদেশের মুক্তিযুদ্ধে তুমিই
অংশ নিয়েছিলে;- মনে পড়ে,
সেই একাত্তরে তোমাকে
‘অর্জুন’ বলে ডাকতুম!

জাহিদ, আমি তো ভাবতেই পারি না
সেই দৃশ্য:
ষাট হাজার যাদবরমণীকে
লুঠ করে নিচ্ছে দস্যুদল,
ধর্ষণ করছে উথালপাতাল; অথচ
অর্জুন চেয়ে দেখছেন,
হাতে তাঁর গাণ্ডীব;
তিনি অসহায়!

-তবে কি গোটা দেশ ক্লীবে পরিণত?


-জাহিদ, আমি কিন্তু প্রশ্নগুলোর উত্তর চাইছি-
যে মুক্তিযোদ্ধার দল, রণাঙ্গনে রক্তকরবী ফুটিয়ে
দেশের স্বাধীনতা এনেছিল
তারা আজ কী করে দর্শক, বৃহন্নলা; বলো তো!

৩/১০/১৯৮৩