কুল গেল কলঙ্ক রইল ওলো সহচরী
যৌবন সময় প্রাণের বন্ধু হলো দেশান্তরী রে
কলঙ্কিনী যার লাগি।।
যৌবন সময় প্রাণের বন্ধু যদি গেল ছাড়ি
আমারই যৌবন সাগরে কে দিবে আর পাড়ি
কালবৈশাখে ফুটল গাছে নানান জাতের ফুল
নতুন মাসে বন্ধুর আশে মন হইল আকুল।।
আইল জ্যৈষ্ঠ কত কষ্ট বন্ধুহারা হইয়া
নতুন ফুলের টাটকা মধু কারে দেই সঁপিয়া
ভ্রমর হইয়া আসত যদি বন্ধু কালাচান
আদরে ফুলেরই মধু সদায় করত পান।।
আষাঢ় মাসে নদী ভাসে নির্ঝরের জলে
কূল ভাসিয়া নদীর স্রোত অতি বেগে
চলে আমারই যৌবনের স্রোত চলছে অবিশ্রাম
কে আসি খেলিবে সাঁতার ঘরে নাই মোর শ্যাম।।
আইল শ্রাবণ নতুন যৌবন বারিষা চঞ্চল
যৌবন নদী হলো বাদী করে টলমল
আমারই যৌবনসাগরে দিলো না কেউ পারি
ও বন্ধু বিনে কে হবে মোর যৌবনের বেপারি।।
ভাদ্র মাসে ছড়া আসে বাড়ির গুয়া গাছে
স্বামী হারা হইয়া নারী আর কতদিন বাঁচে
পন্থপানে চাইয়া রইলাম নারী অভাগিনী
যাইতে নারী তার উদ্দেশ্যে বাদী ননদিনী।।
ভাদ্র গেল আশ্বিন আইল বারিষা হলো শেষ
আমি রইলাম আসার আশে শ্যাম রইল বিদেশ
যৌবন নিশি প্রভাত হইল বন্ধু না আসিল
অভাগিনীর মনের দুঃখ মনেতে রহিল।।
আশ্বিন গেল কার্তিক আইল নদী গেল শুকাইয়া
আর কি শ্যাম আসিবে দেশে ভরা নদী বাইয়া
আমি অবলা নারীর আশায় পড়ল ছাই
এ নব যৌবন আমি আর কারে বিলাই।।
অগ্রহায়ণ মাসে সবে হাসে মাঠে পাকে ধান
গৃহস্থ ভাই ধানের গোলা করতেছে নির্মাণ
আমি অবলা নারী রইলাম আসার আশে
কার জন্যে সাজাইলাম শয্যা বন্ধু নাই মোর দেশে।।
পৌষ মাসে দারুণ উষে করল অন্ধকার
দুঃখেরই উপরে দুঃখ কত সইব আর
গাছেতে কমলা পাকে কত লোক খায়
আমারই যৌবন কমলা ডালেতে শুকায়।।
পৌষ গেল মাঘ আসিল শীতের বড়ো ভয়
সহায় সম্বল তার পতি যার সদয়
আমি অবলা নারীর অসার জীবন
প্রাণবন্ধু পাইলে তারে করতাম আলিঙ্গন।।
ফাল্গুন মাসে ডালে বসে কোকিল করে রাও
ডাকিও না রে প্রাণের কোকিল আমার মাথা খাও
যায় বসন্ত প্রাণকান্ত নাই রে আমার দেশে
দায় হইল মোর প্রাণী রাখা শীতল বাতাসে।।
আইল চৈত্র কালবসন্ত যাবে রে ফুরাইয়া
যৌবন লীলা সাঙ্গ হলো বন্ধু রে না পাইয়া
কয় দুর্বিন শাহ কেন্দে কেন্দে গেল বারমাস
যাইতে হলো ছেড়ে দিয়া, দিয়া বিদেশের প্রবাস।।
(বারোমাসি)