দোয়েলের শিস্‌

দুর্ভেদ্য তিমির ঘন রাত্রির তোরণ হ’তে ভেসে আসে দোয়েলের শিস্
সন্ধ্যার বালুতে জ্বলে দিবসের শেষ সূর্য বিচিত্র ভূষায়
অজ্ঞাত রাত্রির তীরে শোনা গেল শেষবার দোয়েলের শিস্
তীক্ষ্ণ সুর সুতীব্র সংগীত!
জানি এ তো বজ্র নয়
বজ্রেরও বিস্ময়
রাত্রি আর মৃত্যুর ইংগিত
দোয়েলের শিস্।

সাদা-কালো দুই রঙে আবদ্ধ তনুকা সুকোমল
সেই পাখি! কণ্ঠে তার বয়ে নিয়ে আসে গীতিশতদল
গোধূলি-ভরানো সুর মুমূর্ষ সূর্যের রক্ত রাগে,
কণ্ঠের নির্ঝর খুলি শেষবার রাঙায়ে সে গেল চলি বিদায়ী পরাগে
সুকোমল সুরে।
এখন আকাশে তার ক্রমাগত কালো রাত্রি পড়ে ঝুরে ঝুরে
তিক্ত-তীব্র বিষ,
দিগন্তের তীর ছেড়ে আঁধারে চলেছে ভেসে দূর হ’তে দূরে
দোয়েলের শিস্।।
ঘুম পাড়ানোর সুরে এ তো শুধু ঘুম ভাঙানোর তিক্ত মাদকতা
এই সুরজালে শুধু ব’য়ে আনে বিপুল স্তব্ধতা

দীর্ঘ নারিকেল তাল রৌদ্র দীপ্ত দিনের মিনারে
ভয়-স্তব্ধ শর্বরীর ধারে
বর্ণহীন তাল-স্তম্ভে, আকাশের গম্বুজে, খিলানে
রাত্রি তার কালো তীর হানে তীর হানে
দোয়েলের শিস্।
সে বিষাক্ত মৃত্যুতীরে ঝ’রে ঝ’রে পড়ে রঙ দিগন্তের ধারে
আর্শির পারার মত জমা হয় এক কোণে স্মৃতির কিনারে
মৃত্যুর আশিস;
দোয়েলের শিস্।।

শুনি দোয়েলের শিস্, সুতীব্র ঝাঁঝালো-
সবে নীড়ে ফেরে পাখী, নিভে যায় আলো,
জ্বলে ওঠে আলো,
ঘুমের সময় আসে, ঘুম ভাঙানোর
তীব্রতায় কেঁপে ওঠে দোয়েলের সুরের ঝাঁঝর।
মরা গাছে, ডালে ডালে
লঘুপাখা মেলিয়া সে বিদায়ের ক্রূর করতালে
জানায় ভাষণ
জানায় শাসন
নেশাতুর বিষ:
দোয়েলের শিস্।।

ঘুমের সময় হ’ল রুদ্ধদ্বার। পাখী
উজাড় করিয়া সুর বনপ্রান্তে ফিরিছে একাকী
শূন্য নীড়ে।
কোন নীড়ে?
যেখানে মৃত্যুর ছায়া ঢাকিয়াছে সে পাখীর সুর
প্রান্তরের শেষ সীমা যেথা হ’ল কাঁকর-বন্ধুর
রাত্রির পর্দায়
সব জ্বালা ঢেলে যেথা পড়ে আছে কঙ্কালের কামনা নির্বিষ
সেখানে ঘুমের পাখি, আবছায়া হ’য়ে আসে
তন্দ্রাতুর দোয়েলের শিস্।।