খলিফাতুল মুস্‌লেমিন

রাত্রি গাঢ়তর হল মদীনার শামাদানে
বাতি নিভে গেছে।
কে তুমি?
মানোনা রাত্রির মানা, চলিয়াছ একান্ত নির্ভয়,
কত চাঁদ জ্বলে জ্বলে খেজুর শাখায় হল ক্ষয়!
কে তুমি, কে তুমি একেলা?
পিঠে ভারী বোঝা নিয়ে চলিয়াছো ক্ষুধিতের দ্বারে,
বারেবারে
মুছিয়া নয়ন!
নেভায়ে সেতারা দীপ চলে গেল মরুর পবন
দূর সিন্ধু ডাকে,
কালো কাঁফনের মত আঁধার দুলিছে দেখ
জয়তুন শাখে
কোথায় তোমার যাত্রা?
সে কোন্ সুদূরে?
কার দ্বারে?
কোন্ প্রান্তরের পারে,
তোমার বলিষ্ঠ দেহ বহে আজ একি গুরুভার,
আরো ভারী বোঝা নিয়ে চলিয়াছে ও চিত্ত তোমার!
একি মানুষের বোঝা? একি মানবতা?
কও কথা?
কে তুমি?
আজ বিয়াবানে বহিতেছে যে বোঝা বিপুল
আলোক-প্রদীপ
একদিন সে আলোয় দেখে নেবে পথহারা
নিরাশা ব্যাকুল
যাত্রীদল-যাত্রাপথ-পিপাসা-আকুল
পথের প্রদীপ।
একি গুরুভার বোঝা দিন-রাত্রি বয়ে যাও তুমি!
মানো না দুস্তর মরুভূমি,
মানো না ঝড়ের কালোশ্বাস,
চোখে মুখে সুদৃঢ় আশ্বাস!
সুবিশাল বুক ভরি বিপুল বিশ্বাস
তোমার পথের ‘পরে কত ঝড় বয়ে গেল,
মুছিল না তব পদরেখা।
কোন ধূলি ডোবালো না তোমার পায়ের শুভ্র ধূলি
মানুষের বুকের মর্মরে
রয়ে গেল চিরন্তন লেখা
মহাকাল বাড়ালো অঙ্গুলি
তোমার মুখের পানে অসীম সম্ভ্রমে…
মদীনার দীপশিখা নিভে গেল ক্রমে
তবুও চলেছ পথে ভারী বোঝা টেনে,
উল্কা তীর হেনে
আদম-সুরাত
বলে গেল তার, দীর্ঘ রাত,
খেজুর শাখার ‘পরে
তারা ঝ’রে পড়ে-
বেদনার সুতীব্র দাহন
করিয়াছে তোমারে উন্মাদ,
কোন কন্টকিত রাত্রি, কোন মরু-বাঁধ
পারে নাই রুধিতে ও গতি
মানুষের দ্বারে দ্বারে অব্যাহত তবু মুক্ত গতি।

জানি নাই তুচ্ছ রাজ্যপাট
তুচ্ছ বালাখানা,
তুচ্ছ প্রলোভন,
যে মানবতার বহ্নি নিত্য তুমি করেছ বহন
তার কাছে অতি ক্ষুদ্র পৃথিবীর শাহীতাজ
মানুষের প্রেমের আসনে
তুমি বন্ধু, রাজ-অধিরাজ।
তোমার দারাজ দিল্ হেলায় জিনিয়া গেল
মানুষের ক্ষুদ্রতার পাপ।
পায়ে পায়ে পিষে গেল দাম্ভিকের বিকৃত প্রলাপ
হে দরদী, সমুদ্র-উদার!
সব সংকীর্ণতামুক্ত খুলে গেলে বিচিত্র সত্তার কারা-দ্বার
তুমি কার কান্না শোনো হে পথিক! কোন দুখিনীর
সন্তান কাঁদিছে
তুমি ভারী বোঝা নিয়ে চলিয়াছ একা ছুটে বেগে
যদি আমি যেতে চাই পিছে
তুমি মানা করো, বলো, এ ভার তোমার:
আমীরুল- মুমিনের খলিফার ভার।

গতি দ্রুততর হয় শিশুর কান্নায়
বিশাল আকাশে বহে ঝড়,
ও বিশাল বুক ভরি’ ক্ষুধাতুর মানুষের
কান্নার খবর তোলে কোন্ সুবিপুল ঝড়?
কে তুমি, উমর?
হে খলিফাতুল মুস্লেমিন!
প্রান্তরের অবকাশে ঐ দেখ মানুষের ঘর!
এখানে নামাও বোঝা, এখানে থামাও গতি
হে বিশ্রান্ত! হে দারাজ-দিল!
তোমার বিপুল বোঝা সাশ্রুনেত্রে হেরিছে নিখিল!
আকাশের নীচে
বিস্ময় মানিছে জিব্রাইল!
হে দারাজ-দিল!
এবার বিশ্রাম নাও,
এবার থামাও গতি,
অন্তহীন পথ-প্রান্তে নাও তুমি মঞ্জিলের ক্ষণিক বিরতি।
দেখ চেয়ে অস্তমুখী চাঁদ চলে মেঘেদের পিছে,
সুবে-সাদেকের শান্ত প্রশ্বাস বহিছে,
মদীনার শামাদানে সকল চেরাগ নিভে গেছে…।