কোন্ বিয়াবানে

কোন সন্ধ্যার বিয়াবানে আজ
থামলো কাফেলা সিপা’সালার?
পেরেশান পথ-যাত্রীরা, ঢুলে
তন্দ্রায় নত উটের সার,
স্খলিত পাথরে ক্লান্ত অশ্ব;
মরে শ্রান্তিতে ঘোড়-সওয়ার।

কোন্ কারবালা ময়দানে এসে
হল এ কাফেলা স্থবির পদ?
কোন্ এজিদের খঞ্জর আজ
বহালো এ বুকে শোণিত নদ?
কোন্ আজাজিল আন্লো এখানে
জিঞ্জির-ভীতি কালো বিপদ?

কোন্ সন্ধ্যার বিয়াবানে আজ
হারালো কাফেলা: যাত্রীদল?
কোন্ জড়তার মরু জুল্মাতে
সূর্য আমার হ’ল অচল?
হাওয়ায় নাইকো জীবনের লেশ
ভাসে জড়ভূমে মৃতের দল।
এ কোন্ আঁধার? সিন্ধুপারের
এ কোন্ আঁধার দিয়েছে হানা?
এ সর্বগ্রাসী আঁধারের চাপে
সী-মোরগ বুঝি গুটায় ডানা!

পথে শম্ভকার ছায়া ফেলে চলে
এ আঁধার আর মানে না মানা।
হাজার বছর পথ চ’লে আজ
দাঁড়াল কোথায় এ মৃতভূমে?
সফেদ রোশ্নি ঢাকা প’ল আজ
কোন্ মৃত্যুর কুয়াশা ধূমে?
নিমেষে দারাজ-দস্ত কমজোর
লুটালো হেলাল ধরণী চুমে!

শুধু কাহ্ফিল-ওয়ারার ডেরায়
দাঁড়াতো যে নিতে বাজুতে বল,
বজ্র-বিভাসে পার হ’য়ে যেত।
জলস্থল;
হারায়ে আজ সে ঝঞ্ঝার গতি
মাছে ক্রমাগত আঁখি সজল।

হাওয়ায় এখানে লাশের গন্ধ,
আকাশ এখানে মৃতাভ ম্লান,
মুয়াজ্জিনের কণ্ঠ তোলে না
এ বিয়াবানের বুকে আজান;
মুসার পরশ না পেয়ে আমার
কোহিতুর শুধু মৃত- পাষাণ।

ফেরাও আমার কাফেলার মুখ
আবার মদীনা পথের পানে,
চলুক কাফেলা মরু পার হ’য়ে
সেই কাহ্ফিল-ওয়ারার টানে;
যেথা সঞ্চয় আবে-হায়াতের
চলো পথ আজ সে সন্ধানে।

কাফেলা সালার! থেমো না আজকে
মরু-সন্ধ্যায় এ বিয়াবানে,
তাকাও অতীত রশ্মির পানে,
তাকাও সমুখ পথের পানে;
শোনো একমনে রাত্রির কোণে
জাগে পূর্বাশা দিনের গানে।

শোনো মরুভূর আতপ্ত সুর-
উটের পায়ের দ্রুত আওয়াজ,
শোনো বহুদূরে লু’ হাওয়ার সুরে
অনাগত মেঘ হানিছে বাজ,
আসে রঙ্গিণ জ্বেহাদের দিন
আনে বিয়াবানে শোণিত সাজ।

এই বিয়াবানে সূর্যের টানে
রাত্রির বুকে আসে প্লাবন,
এই বিয়াবানে তৃণের উজানে
জয়তুন বুকে জাগে স্বপন;
এই বিয়াবানে আবার কাফেলা
ফিরে পাবে তার নব জীবন।।