পাঞ্জেরী

রাত পোহাবার কত দেরী পাঞ্জেরী?

এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?
সেতারা, হেলাল এখনো ওঠেনি জেগে?
তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;
অসীম কুয়াশা জাগে শূন্যতা ঘেরি।

রাত পোহাবার কত দেরী পাঞ্জেরী?

দীঘল রাতের শ্রান্ত সফর শেষে
কোন্ দরিয়ার কালো দিগন্তে আমরা প’ড়েছি এসে?
একী ঘন-সিয়া জিন্দেগানীর বা’ব
তোলে মর্সিয়া ব্যথিত দিলের তুফান-শ্রান্ত খা’ব,
অস্ফুট হ’য়ে ক্রমে ডুবে যায় জীবনের জয়ভেরী।
তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;
সম্মুখে শুধু অসীম কুয়াশা হেরি।

রাত পোহাবার কত দেরী পাঞ্জেরী?

বন্দরে ব’সে যাত্রীরা দিন গোণে,
বুঝি মৌসুমী হাওয়ায় মোদের জাহাজের ধ্বনি শোনে;
বুঝি কুয়াশায়, জোছনা-মায়ায় জাহাজের পাল দেখে।
আহা পেরেশান মুসাফির দল
দরিয়া কিনারে জাগে তক্দির,
নিরাশার ছবি এঁকে।

পথহারা এই দরিয়া-সোঁতায় ঘুরে
চলেছি কোথায়? কোন সীমাহীন দূরে?
মুসাফির দল ব’সে আছে কূল ঘেরি।
তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;
একাকী রাতের ম্লান জুলমাত হেরি।

রাত পোহাবার কত দেরী পাঞ্জেরী?

শুধু গাফলতে, শুধু খেয়ালের ভুলে
দরিয়া-অথই ভ্রান্তি নিয়াছি তুলে,
আমাদেরি ভুলে পানির কিনারে মুসাফির দল বসি
দেখেছে সভয়ে অস্ত গিয়াছে তাদের সেতারা, শশী;
মোদের খেলায় ধূলায় লুটায়ে পড়ি’
কেঁদেছে তাদের দুর্ভাগ্যের বিস্বাদ শর্বরী।

সওদাগরের দল মাঝে মোরা ওঠায়েছি আহাজারি,
ঘরে ঘরে ওঠে ক্রন্দনধ্বনি আওয়াজ শুন্ছি তারি।
ওকি বাতাসের হাহাকার,- ওকি
রোণাজারি ক্ষুধিতের!
ওকি দরিয়ার গর্জন,- ওকি বেদনা মজলুমের!
ওকি ক্ষুধাতুর পাঁজরায় বাজে মৃত্যুর জয়ভেরী!
পাঞ্জেরী!
জাগো বন্দরে কৈফিয়তের তীব্র ভুকুটি হেরি;
জাগো অগণন ক্ষুধিত মুখের নীরব ভূকুটি হেরি;
দেখ চেয়ে দেখ সূর্য ওঠার কত দেরী, কত দেরী৷।