পরিপ্রেক্ষিত

মাটীর আরশি হেথা। মানুষের মৃত্যু দেখে-
অপমৃত্যু এই,
প্রবল ক্ষুধার জ্বালা, ধর্ষিতা নারীর শব মৃত্যুর আগেই।
তবু মন, ওরে মোর মন
কান পেতে শোনো তুমি জীবনের বিপুল স্পন্দন।
তুমি জানো এ-মৃত্যুর চির বন্ধ্যা রুক্ষ মরুতল,
দীর্ণ করি অনায়াসে যেতে পারে আমার লাঙল।
সে সূর্য ফলার মুখে-বিচ্ছুরিত বিদ্যুৎ প্রতাপ
নিমেষে নিমেষে ছেড়ে গাঢ় কৃষ্ণ শর্বরীর চাপ,
আকাশ গহ্বর ছিঁড়ে রজনীর ক্রূর নাগপাশ
নিমেষে ফাটিয়া পড়ে রক্ত ঊষা-আগ্নেয় কাপাস,
দিগন্তে সোনালি রঙে পেঁজা তুলা ছিটায় আকাশ,
পলকে ঘুচিয়া যায় আলস্যের দীর্ঘ অবকাশ,
ওরে মন, ওরে মোর মন
দিকে দিকে সেই তীক্ষ্ণ লাঙলের করো অন্বেষণ।
ঐ দেখ শিশু কাঁদে, ঐ শোনো দিকে দিকে মৃত্যুর খবর,
চিরদিন বয়ে মরে ধরণীর সুপ্ত শিশু নিরাশার স্তর,
ওরা জাগে চিরদিন ব্যথাতুর ঘুমহারা রাত্রির প্রহর,
পেষণের মর্মান্তিক কালো চাপ রচিতেছে ওদের কবর,
কলকারখানা গর্ভে আঁকড়িয়া প্রতিদিন ধনীর শহর,
মাঠে মাঠে, শস্যখেতে জলেস্থলে রচিতেছে ওদের কবর।

বাতাসে মৃত্যুর হাহাকার,
সন্ধ্যা নামে আসন্ন শীতের।
ওরে মন তুমি কারে ডাকো?
আর্তসুর ওঠৈ সংগীতের:
আজ রাত্রে ফুটিবে না তারা?
আজ হবে নিশ্বাস নিসাড়?
আজ শুধু ভাসিবে কেবল
বাতাসে মৃত্যুর হাহাকার?
বলো ‘নহে’, বলো ‘নহে’, বলো ‘নহে’
এই ক্লিন্ন, এই অসমান-
বাতাসের হাহাকার দীর্ণ করি নিয়ে যাব সম্পূর্ণ আঘ্রাণ
পূর্ণ জীবনের।
মরণ দিনের
সমুদ্র-সীমানা মোরা পার হয়ে নিয়ে যাব
আত্মার পাথেয়,
এই ভাঙা দল, এই অবজ্ঞাত, এই লুণ্ঠিত
ধূলিতলে হেয়
বিশীর্ণ যাত্রিক নিয়ে গড়ে যাব ধরণীর নতুন মিছিল,
দিনের বল্লম হেনে খুলে যাব রজনীর কারা অন্ধ খিল।
…দিকে দিকে সুসম্পূর্ণ চাষ,
স্তরে স্তরে ফেটে-পড়া, আকাঙ্ক্ষিত আগ্নেয়-কাপাস,
সুদীর্ঘ ফলার মুখে এ ভয়াল নিরাশার দীর্ঘ কালো চাপ,
সূর্যের বল্লম জানি উচ্ছেদ করেছে আরও রজনীর ছাপ।
তারপর কী আশ্চর্য! সপ্তবর্ণ শুভ্রতায় দীপ্ত জলস্থল
মাঠে মাঠে সোনার ফসল,
সূর্যের লাঙল।।