শাহরিয়ার

শাহেরজাদীর ঝরোকা’য় এসে সাইমুম স্নায়ু শ্রান্ত শিথিল,
খোঁজে ওয়েসিস মরু-সাহারার চিড় খাওয়া দিল শূন্য নিখিল।
এ মৃত ঊষর বালুতে আবার জাগাবে আনার দানা;
কালো কামনার লাগাম ধ’রবে টানি?
উচ্ছৃঙ্খল রাতের ভুলের আজ বুঝি শেষ নাই,
ভুলের মাটিতে ফুটবে না ফুল জানি।

হাজার নাজুক কুমারীর মুখ ভাসায়ে লোহুর স্রোতে
ছুটেছিল সিয়া জিন্দিগী নিয়ে যে পশু মৃত্যুপারে,
হাজার ইশারা ডেকে ডেকে গেছে তারে
থামেনি তবু সে অন্ধ ছুটেছে পথ হ’তে ভুল পথে…

মনে প’ড়ে সেই নওল ঊষার হাসিন পিয়ারা দিল
গ্লানি-কলঙ্কে মুছে গেছে হায় আমার সারা নিখিল,
সারা মনে ভাসে রক্তের লাল ছোপ,
সারা গায় জাগে কলুষিত বদফাল,
জাগে জঘন্য লালসার কালো পাপ,
শাহরিয়ারের নীল আকাশের সিতারা করে বিলাপ…
শিরায় আমার জাগেনাকো আর জোছনা-শারাব ধারা
আগুনের মত জ্বলে বুকে ইনসাফ,
সাত আলিশান চাঁদোয়ার নীচে যেন এ গোর আজাব
জড়োয়া জড়ানো কিংখাবে জাগে এ মন সর্বহারা,
খুঁজে ফেরে শুধু দিলের দোসর তার;
চিড় খেয়ে বুকে জেগে ওঠে শুধু সাথীহারা হাহাকার।

হাজার রাতের কাহিনী তোমার
হাজার রাতের গান,
ধরে মাহতাব সে রঙিন খা’ব
জাগে সুর-সন্ধান।

সেতারের তারে যে শূন্য ব্যর্থতা
ম্লান পেরেশান শূন্য শিথান শুনে যাই সেই কথা।
মনে প’ড়ে শুধু অসংখ্য বদকার,
কোন কুহকিনী আঙ্গস্তরী স্মৃতি,
ঢেকেছে আমার মুক্ত নীল কিনার,
জিন্দিগী মোর হ’ল আজ শোকগীতি।
পিয়াসী এ মন সুদূর সওদাগর
নয়া জৌলুসে হারানো ভিটাতে বাঁধিতে চায় সে ঘর!

চাঁদির তখতে চাঁদ ডুবে যায়
পাহাড় পেতেছে জানু,
নতুন আকাশে জীবনের সুর
জাগাও হাসিন বানু।

অথচ জানি এ জিন্দিগী ঘোরে যেন এক পরোয়ানা
বাঁকা শড়কের পথে মেলে ফের কমজোর লোভী ডানা,
তুফানের মাঝে হ’তে চায় বানচাল
জানে সে কোথায় সূর্য তবুও টানে সে আঁধি আড়াল,
ফিরে ফিরে চায় ডুবতে অন্ধ পাঁকে
ঢেলে যেতে চায় জহরের জ্বালা জীবনের প্রতি বাঁকে।

ছুটেছে সে আজ অন্ধের বেগে পাহাড় যেখানে ঢালু,
মান সাহারায় প’ড়ে আছে হায় মুর্দার মত বালু,
যে বিরাণ মাঠে ফোটে না আনার দানা,
সেই নিরন্ধ্র মাঠে এ অন্ধ মন ছোটে একটানা,
উল্কা-আহত পথে পথে ফেরে কাঁদি।

জুলমাত-ম্লান ডেরায় চেরাগ জ্বালাও শাহেরজাদী!
আমার মাটিতে ছড়াও আনার দানা,
হে উজীর-জাদী! আজ তুমি আর শুনো না কারুর মানা,
হাজার নাজুক কমনীয় মুখ যেখানে ভাসছে আর
আতশী দহনে খুনের তুফানে জ্বলছে শাহরিয়ার।