শহীদে কারবালা

উতারো সামান, দেখ সম্মুখে কারবালা মাঠ ঘোড়সোয়ার!
জলে ধুধু বালু দোযখের মত, নাই সব্জার চিহ্ন আর।
আকাশে বাতাসে কার হাহাকার? পান্থপাদপ লোহু সফেন,
আজ কারবালা ময়দানে মোরা দাঁড়ায়েছি এসে হায় হোসেন!

খুনের দরিয়া দেখেছি স্বপ্নে, কারবালা মাঠে দেখেছি খাব,
আহাজারি ওঠে দুনিয়া জাহানে, ভাসে আস্মানে কোটি বিলাপ;
হবে সয়লাব দুনিয়া জাহান- শান্ত মক্কা মুয়াজ্জমা;
জুলুমের তেগ হানবে জালিম পাবে না এখানে উদার ক্ষমা।

দিনান্ত ঝড়ে জুলমাত-ম্লান শামিয়ানা টানে কোন্ বে-দীন?
কুফার দাওয়াত হ’য়েছে ব্যর্থ, দাঁড়াও এখানে সংগীহীন,
দেখ এজিদের খঞ্জর ধার, শোন অগণন আশ্বাস;
দেখ সম্মুখে লানতের মত কারবালা মাঠ বিশ্বত্রাস।

উতারো সামান, দাঁড়াও সেনানী নির্ভীক-সিনা বাঘের মত।
আজ এজিদের কঠিন জুলুমে হ’য়েছে এ প্রাণ ওষ্ঠাগত,
কওমী ঝাণ্ডা ঢাকা প’ড়ে গেছে স্বৈরাচারের কালো ছায়ায়,
পাপের নিশানি রাজার নিশান জেগে ওঠে আজ নভঃনীলায়,
মুমিনের দিল জ্বলছে বে-দিল জালিম পাপীর অত্যাচারে
নিহত শান্তি নিষ্কলঙ্ক শান্তিপ্রিয়ের রক্তধারে,
হেরার রশ্মি কেঁপে কেঁপে ওঠে ফারানের রবি অস্ত যায়!
কাঁদে মুখ ঢেকে মানবতা আজ পশু শক্তির রাজসভায়!

ঐ শোন দূরে উষর মরুতে শত্রুসেনার পদধ্বনি,
নেজা তলোয়ার ঝলসিয়া ওঠে দূর মরুতটে উঠছে রণি
ফোরাতের তীরে ঘাঁটি পেতে করে এজিদ সৈন্য কুচকাওয়াজ
উতারো সামান, মওতের মত এল কারবালা সাম্‌নে আজ!

ভীরু কাপুরুষ জীবন আঁকড়ি অন্তিম ক্ষণ করে স্মরণ;
বীর মুজাহিদ নির্ভীক বুকে করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন!

হোক্ দুশমন অগণন তবু হে সেনানী। আজ দাও হুকুম
মৃত্যুসাগরে ঝাঁপ দিয়ে মোরা ভাঙবো ক্লান্ত প্রাণের ঘুম।

হবে কারবালা মরু ময়দান শহীদ সেনার শয্যা শেষ
হে সিপাহ্-সালার! জঙ্গী-ইমাম আজ আমাদের দাও আদেশ!

বাজে রণ-বাজা, মাতে দুশমন কাঁপে শংকিত পৃথ্বীতল
দাও সাড়া দাও মুজাহিদ সেনা! সত্য পথের সাধকদল,
ফেড়ে চলো আজ দুশ্মন ব্যুহ বেহেশ্ত অথবা ফোরাত-তীরে
আসে অগণন শত্রু বাহিনী দিগন্ত-ধনু দুনিয়া ঘিরে!

হে ইমাম! দেখ বিস্মিত রবি তোমার শৌর্য দেখ্ছে আজ
তোমার দীপ্ত পৌরুষে ম্লান শত্রু সেনার জরীন তাজ!
ভীরু বুজদিল পারে না সইতে তোমার যুদ্ধ আমন্ত্রণ
তীর ছুঁড়ে খুঁড়ে বহুদূর হ’তে শত্রু বাহিনী দেখায় রণ।

তৃষায় তোমার ছাতি ফেটে যায়, কাঁদে তৃষাতুর শিশু ডেরায়,
নারীর কান্না শুন্ছো ইমাম? ফোরাত এখনো রুদ্ধ হায়!
কারবালা মাঠ হ’ল দিনান্তে মুজাহেদীনের শেষ কবর
ফোরাতের তীর রুদ্ধ এখনো ফোরাত জয়ের নাই খবর!

সূর্য এখনো নামেনি অস্তে তবু রাত্রির মরণ ছাপ,
নেভে তক্দীরে আফতাব, নেভে মুজাহেদীনের প্রাণ প্রতাপ,
খিমার দুয়ারে আহাজারি ওঠে, কাঁদে শিশু-নারী মরুতৃষায়
ভরে হাহাকারে সাত আস্মান অজানা রাতের ঘন ব্যথায়!

হে বীর! এখন চলেছ একাকী সকল সঙ্গী হারায়ে, হায়
আহত সিংহ, ক্ষত তনুতটে ঝ’র্ছে রক্ত শতধারায়।
এ কোন্ ক্লান্তি ঘিরেছে তোমাকে হে দিলীর শের, সংগীহীন,
ফোরাতের তীরে নিভে যায় রবি শেষ হ’য়ে আসে রক্ত দিন!

শক্রর তীর বুকে এসে বেঁধে নাই ভ্রুক্ষেপ অসাবধানী!
দুধের বাচ্চা মরে গেছে চেয়ে পিয়াসের মুখে কাতরা পানি।
এক বছরের হাসিন শিশুকে তীর হানিয়াছে ভীরুর দল,
ভোলো এ শ্রান্তি ক্লান্ত সিংহ! জাগাও তোমার সুপ্তবল!
ঝাঞ্জারা সিনা তবুও সিংহ জয় ক’রে নিল ফোরাত তীর,
আঁজলা ভরিয়া মুখে তুলে নিল ফোরাত নদীর শীতল নীর।
লাগলো আবার তীরের আঘাত পানি ফেলে দিয়ে দাড়ালো বীর
হাহাকার ক’রে উঠলো সভয়ে ফোরাত নদীর মুক্ত তীর।

বাজে রণ বাজা এজিদের দলে তলোয়ার তীর নেজার ছায়,
জাগে শংকার কাঁপন আকাশে, লাগে মৃত্যুর রং ধুলায়,
সে রণভূমিতে ক্লান্ত সিংহ চলে একা বীর মরণাহত;
ক্ষত তনু তার তীরের আঘাতে লটালো বিশাল শিলার মত।
জীবন দিয়ে যে রাখলো বাঁচায়ে দ্বীনি ইজ্জত বীর জাতির
দিন শেষে হায় কাটলো শত্রু সীমার সে মৃত বাঘের শির।

তীব্র ব্যথায় ঢেকে ফেলে মুখ দিনের সূর্য অস্তাচলে,
ডোবে ইস্‌লাম-রবি এজিদের আঘাতে অতল তিমির তলে,
কলিজা কাঁপায়ে কারবালা মাঠে ওঠে ক্রন্দন লোহু সফেন
ওঠে আসমান জমিনে মাতম; কাঁদে মানবতা: হায় হোসেন।।