তাজ্জব ব্যাপার

(জনৈক মেটে ফিরিঙ্গির আকস্মিক বাংলা কথা শুনিয়া)

বাংলাও বলেন?- আহা, তাতেই তো কৃতার্থ এ দেশ
অথবা এ দেশবাসী তাকায় বিস্ময়ে নির্নিমেষ।
কমসে কম দু’ বছর কিংবা আরো কিছু দীর্ঘ কাল
কাটায়ে বিলেতে যিনি ফিরেছেন বাড়ন্ত কপাল;
বিজাতীয় লেবাসের সাথে তার নিজস্ব জবান
উল্টে যাবে অকুস্থলে এ কথা তো জানি মেহেরবান।

কারণ খান্দানী ঘরে জন্ম নিয়ে, করে এস্তেমাল,
হামেশা ফিরিঙ্গী বুলি,- যাঁরা হন প্রত্যহ বেচাল
অর্থাৎ সাহেবজাদা যাঁরা ঠিক, আপনি তাঁদের
শীর্ষস্থলে না হলেও তলদেশে নন তো গাছের।
‘উপরন্তু দীর্ঘ কাল কাটায়ে বিদেশে বেকারীর
কি ভাবে কবেন বাংলা?’- জানায় বয়স্য দিলদার।

বিদেশী সাজের মত বিজাতীয় বুলি আপনার
সিন্দবাদ জাহাজীর ঘাড়ে তাই ছিল গুরুভার।
দুর্বহ সে বোঝা নিয়ে এগিয়েছে এ জাতি ততটা
ফাকা প্রগতির পথে বাহ্য জ্ঞানে বোঝেন যতটা।
কাজেই যে জিন্দেগানি করেন আনন্দে গোজরান
কে না জানে দেশী ভাষা সে ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বেমানান!
লেবাসের সাথে ঠিক মিল রেখে এখানে অন্তত
দেশীভাবে কথা বলা আপাতত হয়নি সঙ্গত।
এ কারণে অন্তরঙ্গ এমনকি পরিচিত যারা
মোসাহেব সেজে নিত্য দরজায় বসালো পাহারা
জাতীয় ভাবের ‘কিছু’ যাতে আর না হয় প্রকাশ
(চেষ্টার কসুর তাতে হয় নাই, রাখি এ বিশ্বাস)।

তাই দেখি আপনার বাচ্চাকাচ্চা এ বাংলা জবান
দেশী ভাষা ছেড়ে করে বিদেশী ভাষায় অন্তর্ধান,
ফিরিঙ্গী জবানে খাসা শুরু হয় তার হাতে খড়ি (!)
বিজাতীয় প্রথামত শিশু কষ্ঠে ঝোলে দড়াদড়ি।
অধিকন্তু খরচ করে শেখান আপনি গৃহিণীকে
পবিত্র ফিরিঙ্গী বুলি (নইলে মান হ’য়ে যায় ফিকে)।

রাষ্ট্র বা জাতির কথা এ ক্ষেত্রে ওঠে না কোন ক্রমে,
ফিরিঙ্গী ভাষা বা ভাব ক্রমাগত ওঠে যে চরমে,
বুলির সর্দার কুলি মানপত্র দিয়ে যায় হেসে,
রাখেন সযত্নে সেটা (মাতৃভাষা হয় একপেশে)।
সকলেই জানে এটা দীর্ঘকাল নকলনবিশ।
দেশী ভাষাটার সাথে রাখেন না কোন মিলমিশ।

তবু কি আশ্চর্য কাণ্ড, ভেবেছিল কে কবে এমন
নিতান্ত অজ্ঞাতসারে মুখ থেকে বাংলা উচ্চারণ!
কে জানে কিসের টানে অথবা কী গূঢ় প্রয়োজনে
অনাদৃতা বাংলা ভাষা স্থান পেল আপনার মনে!
তাই আজ সচকিত, বিস্মিত, স্তম্ভিত জনগণ
নির্বাক বিস্ময়ে শোনে আপনার কথোপকথন।।