ত্রয়ী

লুব্ধ
চ’লেছি। চলার পথে দীন লোভে চেয়েছি বিশ্রাম:
পউষের শীত রাত পৃথিবীতে আকাশে তুহিন,
বরফের হিমস্পর্শ- তারি মাঝে চাহিয়াছি দিন,
চেয়েছি প্রাণের উষ্ণ নিবিড় সান্নিধ্য অবিরাম
দুঃসহ রাত্রির বোঝা তার মাঝে একটু আরাম!
রাত্রির তিমিরারণ্যে সুপুষ্পিত তারার আলোক
চেয়েছি আঁধার কেটে নীহারিকা স্বপ্নময় হোক
পথশ্রান্ত চাহিয়াছি- দীনতায় ম্লান ব্যর্থকাম।
কখনো ছেয়েছে মেঘ- অন্ধকারে কখনো বিদ্যুৎ।
চকিতে চেয়েছি উর্ধ্বে (এ আশ্বাস, ক্ষণিক আশার
বিদ্যুৎ ঢেকেছে মেঘে দুর্নিবার নিয়তি অদ্ভুত
ক্ষণিক বিদ্যুৎ আশা নিরাশায় মোছে বারবার।)
তার পর? আরো চলা, আরো চলা- শেষ লক্ষ্য জানি
দুঃসহ আশঙ্কা বুকে সমাপ্তির ব্যর্থতার গ্লানি।

শ্রান্ত
হায়রে মানুষ! কভূ পথের সন্ধান নাহি পেলে
চ’লেছো তো কতকাল চলিবার নাহি হ’ল শেষ
তবুও বেদনা-শ্রান্ত বেলাশেষে ম্লান আঁখি মেলে
ব’লেছ- আমরা যাত্রী আমাদের পথ নিরুদ্দেশ।
দিগন্তে হারায় পথ স্বপ্ন শেষ ছায়া দিকে দিকে
তোমার মুহূর্ত ভিক্ষা, তারে বাধা দেয় মহাকাল!
সহসা পেয়েই ভয় কঁদিয়া চেয়েই চারিদিকে:
অশ্রুত মলিন নয় বুকে তার জন্মে না শৈবাল!
অশ্রুর কখন জন্ম? মানুষের জন্মদিন জানি।
পার হ’য়ে আসিয়াছি শতাব্দীর কত মৃত নদী-
ক্রমে পথে বোঝা ভারী। সেই ভারী বোঝা নিত্য টানি
চলেছি সন্ধ্যার পথে যেতে হবে তিমির অবধি।
আকাশে উঠিবে তারা, আমাদের ললাট-সন্ধানী
জাগিবে সম্মুখে আরো অনাগত শতাব্দীর নদী।

বিদূষক
তুমি কি পুতুল? তুমি অতি সাবধানী বিদূষক।
ব্যঙ্গ করো জীবনের প্রচ্ছন্ন বেদনা গুপ্ত করি,
যে ব্যথা গুমরি মরে, আঘাত হানিতে তারে সখ
মৃতের শ্মশান ‘পরে জাগো তুমি শবের প্রহরী।
জানি তুমি হাসো কাঁদো। সেই হাসি অশ্রুর আশ্রয়ে
জানো না তোমার মন নিরন্তর কি ব্যথায় দহে,
প্রতিদিন হাসো কাঁদো, দোলো আশা-নিরাশা সংশয়ে
মধু মিলনের রাতে ভীত হও সুদূর বিরহে!

তবু তুমি বলো নিত্য:দীন রজনীর পাত্র হ’তে
পান ক’রে যাব সূর্য তারকার স্বপ্ন সমুজ্জ্বল
নিশীথে প্রিয়ার ওষ্ঠ, শ্যাম ধরণীর পুষ্পদল-
যা কিছু দিয়েছে দেখা, দেয় নাই অস্পষ্ট আলোতে
সব নেব। নাহি পাও। বঞ্চনা করিছে প্রবঞ্চক
তাই বৃথা হাসো কাঁদো ব্যর্থ ভ্রান্ত বিদূষক।