আমাদের ভালোবাসা

একশো মাইল বেগে ঝড় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বয়ে যেতে পারে না কখনো।
আধঘণ্টায় মেঘ ও মানুষ ও গাছপালার হৃৎপিণ্ডে
নতুন জন্মের প্রচণ্ড চিৎকার পুরে দিয়ে মিশে যায়-
যে-রকম আমাদের ভালোবাসা।

দিনের পর দিন অবিরাম চলতে পারে না ভূমিকম্প।
মাটি ও মানুষকে কয়েক মুহূর্তে থরথর ক’রে
আলোড়িত এলোমেলো ক’রে থেমে যায়-
যে-রকম আমাদের ভালোবাসা।

স্থিরবিদ্যুৎ ব’লে কিছু নেই নতুন মেঘের আকাশে।
আকাশের এপারওপার একটি তীক্ষ ছুরিকায় ছিঁড়েফেড়ে
জীবনের মতো অন্ধকার ঝলসে দিয়ে মুহূর্তেই নিভে যায়-
যে-রকম আমাদের ভালোবাসা।

পদ্মায় জোয়ার স্থির হয়ে থাকে না কোনো দিন।
তীব্র স্রোতে তার সব রক্তনালি ভ’রে দিয়ে
গড়িয়ে পড়ে অবধারিত ভাঁটায়-
যে-রকম আমাদের ভালোবাসা।

বাঙলার বসন্ত থাকে কয়েক সপ্তাহ।
বনের পর বন উতলা আর হলদে আর চঞ্চল আর লাল
ক’রে চ’লে যায় অধীর বসন্ত-
যে-রকম আমাদের ভালোবাসা।

চৈত্রের গোলাপ টকটকে লাল হ’য়ে জ্বলে তিন চার দিন।
দীর্ঘশ্বাসের মতো এক গোপন বাতাসে
অগোচরে ঝ’রে যায় অমল পাপড়ি-
যে-রকম আমাদের ভালোবাসা।

আমাদের দীর্ঘশ্বাসের আয়ু এতো কম।
রক্ত-মাংস আর বুকের ভেতর দিয়ে ঠাণ্ডা নদীর মতো
বয়ে গিয়ে নিঃশেষে মিলায়-
যে-রকম আমাদের ভালোবাসা।

তোমার চোখের পাতায় অশ্রুবিন্দু এতো সুন্দর ক্ষণায়ু।
আমাদের অস্তিত্বের মতো টলমল ক’রে উঠে
মুহূর্তেই অনন্তে ঝ’রে যায়-
যে-রকম আমাদের ভালোবাসা।