হাঁটা

একসাথে অনেক হেঁটেছো।
আজ তুমি মনে করতেও পারবে না
শেষ কবে একলা হেঁটেছো। যেদিন প্রথম টলোমলো
দাঁড়াতে শিখেছিলে
সেদিন থেকেই তোমার একলা হাঁটার ঝোঁক।
একলা হেঁটেই তুমি ছুঁয়েছিলে মেরু।
একা হেঁটে শুধু নতুন পায়ের জন্যে প্রস্তুত এক পথ
দিয়ে পৌঁচেছিলে তুমি বাঁশবাগানে, পুকুরপারে,
সবাই তোমাকে যেখানে খুঁজছিলো
তুমি সেখানে ছিলে না,
একা হেঁটে লেবুগাছ কুমড়োর জাংলা পেরিয়ে
চ’লে গিয়েছিলে হিজলের বনে।
তারপর ওই পথে সবাই হেঁটেছে।
একলা হেঁটে তুমি ঢুকেছো দিগন্তে,
একা হেঁটে গেছো তুমি পদ্মার সবচেয়ে বিপজ্জনক
ভাঙনের ধারে,
একা হেঁটে গেছো মাঘের কুয়াশায়,
বোশেখের তীব্র পানীয়র মতো রৌদ্রে।
তুমি একলা হেঁটেছো
সামনে কেউ নেই
পেছনেও কেউ নেই
ডানে কেউ নেই বায়ে কেউ নেই
তোমার সাথে হেঁটেছো একা তুমি।
তারপর পথে নামলেই
অসংখ্য পায়ের শব্দ,
পথে নামলেই অসংখ্য পায়ের দাগ।
তখন তোমার কোনো নিজস্ব পথ ছিলো না
তোমার কোনো নিজের পায়ের দাগ ছিলো না
নিজের পায়ের শব্দ ছিলো না।
তখন দিগন্তে যাওয়ার ছিলো একটিই পথ
দিগন্ত থেকে ফেরারও একটিই পথ
তখন নদীতে যাওয়ার পথ ছিলো একটিই
ফেরারও একটিই বিধিবদ্ধ পথ
সব পায়ের একই শব্দ
সব পায়ের একই দাগ
ঘর থেকে বেরোনোর একটিই পথ
ঘরে ফেরারও একটিই পথ
তখন গন্তব্য একটিই
ফেরাও ছিলো একই অভিমুখে।
একসাথে স্বপ্ন দেখেছো; প্রতিঘুমে একই স্বপ্ন
তোমার নিজের কোনো স্বপ্ন ছিলো না
একসাথে গান গেয়েছো: প্রতিদিন একই গান
তোমার নিজের কোনো গান ছিলো না।
তখন একসাথে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছো
তোমার নিজের কোনো দীর্ঘশ্বাস ছিলো না।
এখন আবার একা পথে নামো,
প্রথম যেমন টলোমলো দাঁড়াতে শিখেছিলে
তেমনি দাঁড়াও,
একা হাঁটো,
সম্পূর্ণ নতুন পথে, একা, হেঁটে যাও।