যদি ওর মতো আমারও সব কিছু ভালো লাগতো

আমার আট বছরের মেয়ে মৌলির সব কিছুই ভালো লাগে।
ওকে একটি গোলাপ এনে দিলে তো কথাই নেই,
গোলাপের দিকে ও এমনভাবে তাকায় যে ওর ভালো লাগার রঙ
গোলাপের পাপড়ির চেয়েও রঙিন হয়ে চারদিকে
ছড়িয়ে পড়ে।

ওকে একটা শস্তা ফ্রক কিনে দিলাম একবার।
ফ্রকটি পেয়ে ও আনন্দে এতোটা লাফিয়ে উঠলো যে আমি খুব
বিব্রত বোধ করলাম।

চিড়িয়াখানায় হরিণ আর খরগোশ দেখে ও যখন ঝলমল করছে
আমি তখন গাধা দেখানোর জন্যে নিয়ে গেলাম ওকে।
ভেবেছিলাম গাধা ওর ভালো লাগবে না, কিন্তু দেখেই ও
চিৎকার করতে থাকে, ‘গাধাটা কী সুন্দর, গাধাটা কী সুন্দর!’

রাস্তায় একবার একটা নোংরা বেড়ালকে
‘কী মিষ্টি’ ব’লে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিলো ও।

খুব শস্তা, চার আনা দামের, লজেন্স্‌ ওকে এনে দিলাম একবার।
ভাবলাম ও নিশ্চয়ই ঠোঁট বেঁকোবে; কিন্তু হাতে পেয়েই
মৌলি ‘কী মজার, কী মজার’ ব’লে ঝলমলে ক’রে তুললো বাড়িঘর।

একজন বাজে ছড়াকার আমাকে উপহার দিয়েছিলো
তার একটি ছড়ার বই। একটা ছড়া প’ড়েই আমি বাজে কাগজের
ঝুড়িতে ছুঁড়ে ফেললাম সেটা। দুপুরে ঘরে ফিরে দেখি
ও সেটি পড়ছে দুলে দুলে; আর আমাকে দেখেই লাফিয়ে উঠে
একটা ছড়া মুখস্থ শুনিয়ে বললো, ‘আব্বু, ছড়াগুলো কী যে মিষ্টি!’
আমি স্তম্ভিত হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।

চাঁদ ওর ভালো লাগে, ছাইঅলীকেও ওর ভালো লাগে।
হরিণ ওর ভালো লাগে, গাধাও ওর ভালো লাগে।
ওকে যাই দিই, তাই ওর ভালো লাগে।
ওকে যা দিই না, তাও ওর ভালো লাগে।
ওকে যা দেখাই, তাই ওর ভালো লাগে।
ওকে যা দেখাই না, তাও ওর ভালো লাগে।
ও যখন একটা গণ্ডারের ছবি বা দেয়ালের টিকটিকির দিকে
মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে, তখন ভেতরে আমি তীব্র বিষের ক্রিয়া
বোধ করি; আর বারবার ভাবি। যদি ওর মতো আমারও সব কিছু ভালো লাগতো।