লেজারুস

গরিব ছিলাম না কখনো, ভিখিরি তো নয়ই, বরং ছিলাম অদ্বিতীয়
ধনসম্পদ স্বর্ণমুদ্রায়, এটা গর্ব নয়; ক্ষমতায়ও সম্ভবত কেউ সমান ছিলো না;
দক্ষিণ সমুদ্র থেকে উত্তর সমুদ্র মেঘেল পর্বত থেকে হীরক পর্বত
আসমুদ্রহিমাচল বিস্তৃত ছিলো আমার শস্যশ্যামল রাজ্য, আজ সবই
জীর্ণ উপকথা, অন্নহীন বস্ত্রহীন জড়াগ্রস্ত মুমূর্ষু প’ড়ে আছি চৌরাস্তায়।
কণ্ঠ ছেঁড়া ব’লে কেউ শুনতেও পায় না আমার তীব্র হাহাকার।

ছিলাম অজস্র সোনার খনির অধিপতি, মাটির গভীর নিচে অন্ধকার
কয়লা পেরিয়ে ঝলমল করতো আমার হীরকরাশি; আমার সমুদ্রে
ঝিনুকেরা ঋতুতে ঋতুতে গর্ভবতী হতো উজ্জ্বল মুক্তোয়; আমার জমিতে
বৈশাখে আশ্বিনে পেকে উঠতো সোনারুপো, উদ্যান আর অরণ্য
জুড়ে ছিলো দিনরাত পাখি আর পুষ্পের মধুর উল্লাস।
আজ কিছুই আমার নেই, আমি আছি কি না তাও বুঝতে পারি না।

আমার আকাশে ছিলো সংখ্যাহীন চাঁদ, আমি চাইলেই উঠতো
পশ্চিমে, মধ্য-আকাশে, আমি চাইলেই বসন্তের বাতাস বইতো পৌষ
মাসে, মাঘের নিশীথে আম হিজলের ডালে ব’সে ডাকতো পাখিরা;
আমার স্বাস্থ্য ছিলো, এবং যৌবন, সৌন্দর্যও সামান্য ছিলো না,
একদিন পারতাম জাগাতে সুর পাথরে আমার আঙুল বুলিয়ে।
আজ কিছু নেই, আমার আঙুল আজ প’চে প’চে অদৃশ্য বিলীন।

লেজারুসের থেকেও নিঃস্ব আমি আজ, মূঢ়তায় ধ্বংস
করেছি রাজ্য, অপচয়ে সমস্ত সম্পদ, মুদ্রা; আমার সোনার খনি
ভ’রে আজ আবর্জনা, দুর্লভ সোনাকে আমি আবর্জনায় পরিণত করেছি;
আমার আকাশে কোনো চাঁদ নেই, একরত্তি জমিও আমার নেই,
চৌরাস্তায় প’ড়ে আছি নিঃস্ব, স্বাস্থ্যহীন, কুষ্ঠআক্রান্ত ভিখিরি।
লেজারুসের থেকেও নিঃস্ব, যার ভিক্ষাভাণ্ডে একটি কণাও পড়ে না।