মৃত্যু

যখন ছিলাম খুব ছোটো চারদিকে আমি
প্রেতের মুখের মতো দেখতে পেতাম মৃত্যুর অদ্ভুত মুখচ্ছবি।
ফুলে দুলে উঠতো তার মুখ, এলোমেলো
জ্যোৎস্নায় আঁকা দেখতাম তার ভয়াল মুখের রূপরেখা।
ভয়ে মাকে আমার দু-লক্ষ হাতে জড়িয়ে ধরতাম।

যখন আঠারো তখন আমার সমগ্র বাস্তব-অবাস্তব জুড়ে
বিষণ্ণ চাঁপার গন্ধ, কার্তিকের কুয়াশার মতো
ভাসতো মৃত্যুর দেহের ঘ্রাণ। তার শরীরের করুণ মধুর ঘ্রাণ
একযুগ ধ’রে আমি শুঁকেছি সঙ্গীতে, পূর্ণিমার ভয়াবহ
চাঁদে, ভাটিয়ালি গানে, মেঘ, শস্য, উথালপাথাল বৃষ্টি,
কবিতার পঙক্তি, খাদ্য, পানীয়, প্রতিটি কিশোরী-
যুবতীর অসম্ভব, অসহ্য সৌন্দর্যে। তখন যৌবন-
প্রেমে আমি আমার দু-কোটি হাতে সারা পৃথিবীকে জড়িয়ে ধরতাম।

এখন চল্লিশ পেরিয়েছি, জীবনের সারকথা কিছুটা বুঝেছি।
এখন অনেকটা স্পষ্ট দেখতে পাই মানুষ ও সভ্যতার পরিণতি,
অনেকটা বুঝি শিল্পকলা আর অসম্ভব সৌন্দর্যের অর্থ-
অদ্ভুত আঁধারে ঘেরা মানুষের আবেগ, উৎসাহ, প্রেম, কাম ও কামনা।
এখন আমার মাঝে মাঝে মৃত্যুর কথা মনে পড়ে;
মনে পড়লেই আমার ভেতরে কে যেনো হঠাৎ
হো হো ক’রে হেসে ওঠে, হো হো ক’রে হেসে ওঠে।