অনুপ্রাণিত কবি আর প্রেমিকের মতো

রবীন্দ্রনাথ

নিজেকে ঈগল, রহস্যের যুবরাজ, নীলিমায় ডানা-ঝাপটানো
দেবদূত ভাবা দূরে থাক, অধিকাংশ সময় নিজেকে মানুষও
ভাবতে পারি না। বোধ করি আমি কুকুর-শুয়োর-তেলেপোকা
প্রভৃতি ইতর পশু আর পতঙ্গের বংশোদ্ভূত;- ওদের সাথেই
গোত্রভুক্ত হ’য়ে উল্লাসে হাহাকারে প্রাণবন্ত ক’রে রাখি আদিগন্ত
আবর্জনাপ। বিষ্ঠার অতলে পাই সুখ; অন্ধকার আমার গোত্রের
প্রিয় ব’লে ডুবে যাই অত্যন্ত পাতালে, যাতে কোনো জ্যোৎস্নারৌদ্র
আমাদের ছুঁতেও পারে না। দুঃস্বপ্ন ব্যতীত কোনো স্বপ্ন দেখি না;
খুলি আর বুকের ভেতরে যে-সামান্য সোনা ছিলো, সে-সমস্ত ঝেড়ে
ফেলে ওই শোচনীয় শূন্যস্থান ভরেছি জঞ্জালে। কখনো সৌন্দর্য
দেখি নি, দেখবো এরকম সাধও পুষি না। শিল্পের ঐতিহ্য শুধু
রক্ষা করি ছুরিকায়, অর্থাৎ খুনোখুনিই আমাদের শুদ্ধ শিল্প;
রাস্তায় ফিনকি দিয়ে ঝরে পড়া রক্তের কারুকাজই প্রশংসিত
চিত্রকলা; দিকে দিকে ধর্ষণই আমাদের থরোথরো প্রেম।
জানি না মেধার কথা; কখনো মহত্ত্ব মনুষ্যত্ব প্রীতি অমরতা
শিহরণ দেয় নি রক্তে। শুধু ভালোবাসি ক্রীতদাসের চেয়েও
ঘৃণ্য অধীনতা- দাও দাও চতুর্দিকে স্বৈরাচারী, পাড়ায় অজস্র
গুণ্ডা, রাশিরাশি লাশে আর গাঢ়তম লাল রক্তে সাজাবো সভ্যতা।
অর্থাৎ আমি নই তোমার উত্তরাধিকারী, রবীন্দ্রনাথ; পতঙ্গ-
পশুর বংশোদ্ভূত আমি- আবর্জনাবাসী, যেখানে কখনো কোনো
রৌদ্র আর জ্যোৎস্না জ্বলে না। কিন্তু অত্যন্ত বিস্ময় আর পীড়া বোধ
করি যখন অতল আবর্জনা-অন্ধকার ভেদ ক’রে এই নোংরা
পতঙ্গেরও অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে তোমার অজর রৌদ্র এবং
লোকোত্তর জ্যোৎস্না, আর এ-পতঙ্গ পঙ্কপুঞ্জে থরোথরো কাঁপতে থাকে
অমর অনুপ্রাণিত কবি ও উথিত প্রেমিকের মতো।