ছোটোবেলায় উঠোনের কোণে স্বপ্নের মতো একরত্তি লাল
একটা ঘাসফুল দেখে বিভোর হ’য়ে গিয়েছিলাম।
তারপর কতো ভোরে সেই একরত্তি ফুল হ’য়ে উঠোনের কোণে
আমি অত্যন্ত নিঃশব্দে ফুটেছি।
আট বছর বয়সে আমার খুব ভালো লেগেছিলো ডালিমের ডালে
ঘুমের মতোন ব’সে থাকা দোয়েলটিকে।
তারপর অসংখ্য দুপুরে আমি ঘুম হ’য়ে ডালিমের শাখায় বসেছি।
পুকুরে পানির সবুজ কোমল ঢেউ হয়েছি অজস্ৰ সন্ধ্যায়।
মাঝপুকুরে বোয়ালের হঠাৎ ঘাইয়ে জন্ম নিয়ে টলমল ক’রে গিয়ে
মিশেছি ঘাস, শ্যাওলা, কচুরিপানার সবুজ শরীরে।
মেঘ হ’য়ে কতো দিন উড়ে গেছি আড়িয়ল বিলের ওপর দিয়ে,
গলগলে গজল হ’য়ে কতো রাতে ঝরেছি টিনের চালে,
নৌকো হ’য়ে ভেসে গেছি থইথই ঢেউয়ের ওপর।
কতো গোধুলিতে তারা হ’য়ে ফুটেছি আকাশের অজানা কোণে।
দুঃখ হ’য়ে ব’সে থেকেছি পার্কের বিষণ্ণ গাছের নিচে।
অশ্রু হ’য়ে টলমল করেছি তার চোখের কোণায়।
কিন্তু আজ, এই অসম্ভব দুর্দিনে, একরত্তি ফুল, পাখি, মেঘ,
বৃষ্টি, ঢেউ, নৌকো, তারা, অশ্রু, বা কুয়াশা নয়
আমি মাথা তুলছি উদ্ধত পর্বতের মতো। চারপাশে নষ্টদের রোষ,
আর শুয়োরের আক্রোশ, বিচিত্র পশুদের আক্রমণ মাথা কুটে
মরে পাদদেশে। আমি বেড়ে উঠছি অবিচল পর্বতের মতো, যখন আমার
পাদদেশে পশুদের কোলাহল, তখন আমার গ্রীবা ঘিরে মেঘ,
বুক জুড়ে বৃষ্টি, আর চুড়োর ওপর ঘন গাঢ় নীল।