রেস্তোরাঁর পার্শ্ববর্তী টেবিলের তরুণের প্রতি

চমৎকার কাটছো কেক, তোমার কফির পেয়ালা থেকে উঠে আসছে
চন্দনের সুগন্ধ, তুমি আঙুলে বাজাচ্ছো বাতাস
তোমার পাশে সে ব’সে আছে
যাকে তুমি জ্যোৎস্না, নিসর্গ, নদী বলে ডাকো।
তোমার পায়ের তলে জুতো ভেদ ক’রে ওঠে উদ্ভিদ
অবিনশ্বর ডালপালায় ভ’রে যায় টেবিল রেস্তোরাঁ সারা রাজধানি।
তোমার রিস্টওয়াচ থেমে আছে সময়ের প্রয়োজন শেষ হয়ে গেছে
কেননা তোমার পাশে সে বসে আছে যাকে তুমি
পৃথিবীর বয়সিনী সময়ের সহোদরা নিরবধি কাল ব’লে ডাকো।

সে-ই তোমার রিস্টওয়াচ, অনন্ত সময়।
তুমিই সম্রাট দিবসের তুমিই অধিপতি সব রেস্তোরাঁ
সমস্ত দুপুর ও অশেষ সন্ধ্যার
তোমার আঙুলে গাঁথা তার পাঁচটি আঙুল
যার ছোঁয়ায় তোমার ঠোঁট দু’-হাতের তালু
ভ’রে গেছে স্বর্ণের সুগন্ধ আর কলকাকলিতে
তোমার পাশে সে ব’সে আছে
যাকে তুমি যুদ্ধোত্তর বিশ্ব ব’লে ডাকো।

আমার টেবিল আজ জ্বলে দাউ দাউ
যেমন জ্বলতো বাঙলাদেশ একাত্তরে
চারদিকে অক্লান্ত অপব্যয়ী করুণ আগুন
স্মৃতি প’চে প’চে যে-গন্ধ উঠতে পারে সে-সব আসছে উঠে
আমার কফির পেয়ালার তলদেশ থেকে
কেকটাকে শক্ত ছুরিটাকে ভোতা মনে হয়।
আমার টেবিলেও ফুটতো মল্লিকা উড়তো প্রজাপতি
ঝরনা বইতো আর পদ্মায় ভাসতো অজস্র ভাটিয়ালি।

তার খোঁপা জুড়ে উঠতো চাঁদ ঝ’রে পড়তো বকুল
আজ সে অন্য কোনো রেস্তোরাঁয়
আর কারো সাথে সুরভিত কেক কাটে কফি ঢেলে খায়।