সামান্য মানুষ

সামান্য মানুষ; অসামান্য কিছু দেখার সৌভাগ্য
হয় নি, দেখতেও চাই নি কখনো; যে-ক-বছর বেঁচে আছি,
সুখী ও অসুখী হয়ে আছি নিজের মতোই সামান্য ঘটনা
বস্তু আর দৃশ্য নিয়ে। কী ক’রে অসামান্য হবো? চারপাশে
যদি সব ক্ষুদ্র হয়, তুচ্ছ হয় খুব, তাহলে কী ক’রে
অসামান্য হ’তে পারি আমি? বেশি সংবাদ রাখি না,
গুজবেও কান দিতে ইচ্ছে ক’রে না; তাই দূরে ঘ’টে যাচ্ছে
যে-সব ঘটনা, অসামান্য ও ঐতিহাসিক, তার থেকে
দূরে আছি; সামান্য মানুষ, বেঁচে আছি নিজের মতোই
সামান্য বস্তুদের নিয়ে। শুনতে পাই দূরে মাঝেমাঝে
ঘটছে অসামান্য কতো কিছু; কিন্তু আমি ধানের গুচ্ছের
থেকে মহৎ কিছুই দেখি নি। কে কোথায় খুন হলো,
কোথায় মিশলো কে নামহীন গোরে, সকাল বেলায়
কে দেখা দিলো অধীশ্বররূপে, সে-সব আমার কাছে
একতাল গোবরের থেকে মূল্যবান মনে হয় নি কখনো; বুঝি
ওই সব মানুষেরা, এবং তাদের সমস্ত ঘটনা অতিশয়
অসামান্য; কিন্তু আমি সামান্য মানুষ কোনোদিন ঢুকি নি প্রাসাদে,
তাই আমি অসামান্য কিছুই দেখি নি। দেখেছি সামান্য
সব কিছু জোনাকি উড়ন্ত তারার মতো একঝোপ
অন্ধকারে, বেলের হলদে শক্ত ডিম, চিতোই পিঠার মতো
চাঁদ শ্রাবণের প্লাবিত আকাশে; এসব, এবং এসবের মতো
সামান্য বস্তুতে ভ’রে আছি আমি। আমার কি লোভ ছিলো দেখতে
অসামান্য কিছু? আমি কি কখনো নিজে অসামান্য হয়ে
উঠতে চেয়েছি? কী ক’রে অসামান্য হবো? অত্যন্ত সামান্য
মানুষের অধীনে করেছি বাস, অতো তুচ্ছ সামান্যদের অধীনে
থেকে কেউ কি কখনো হয়ে উঠতে পারে অসামান্য? বদ্ধ ঘরে
বাড়তে পারে শালতাল? আমি বেড়ে উঠতে পারি নি;
সামান্য মানুষ- মাছরাঙা, ঘোলাজল, আউশ, আমন, খড়কুটো,
আমের বউল আর হঠাৎ বৃষ্টির থেকে অসামান্য কিছুই দেখি নি।