ভূতভবিষ্যৎ

সামনে এগোই, পেছনে চিৎকার কাঁপে শূন্যতার স্তরেস্তরে
‘আয়, ফিরে আয়।’

এগোই সম্মুখে: পঁচিশ কিলোমিটার দুরে ভূমিকম্পগ্রস্ত টাওয়ারের
মতো হেলে আছে জরাজীর্ণ ব্রোঞ্জের দিগ্বলয়, কাত হ’য়ে আছে
ভয়াবহ ফাটল-ধরা সূর্যাস্ত; কয়েক মাইল দূরে পশ্চিম আকাশের
অন্ধ কোণে, বারবার আন্দোলিত হ’য়ে এদিকে-ওদিকে,
উড়ছে সময়ের কালো ঝড়ে অসহায় শাদা সেই পাখির পালক।

সামনে এগোই, পেছনে চিৎকার বাজে শূন্যতার স্তরেস্তরে-
‘আয়, ফিরে আয়।’

এগোই সম্মুখে: বিবস্ত্র দণ্ডায়মান মধ্যপথে যোনি-ও জরায়ু-হীন,
পাথরের সমান ক্ষুধার্ত, অন্ধ এক নারী; অনাগত মানুষের
শোভাময় মমিপুঞ্জ দুই পাশে গণ্ডারের মতোন নিঃসঙ্গ এক
দুঃস্বপ্নদ্রষ্টা বিজন জলসাঘরে ঝাড়লণ্ঠনের মতো শত চোখে জ্বেলে
রাখে স্বর্ণকঙ্কালের নর্তকী-শরীর থেকে খ’সে-পড়া ঝলকিত নাচ।

সামনে এগোই, পেছনে চিত্তার জ্ব’লে শূন্যতার স্তম্ভেস্তম্ভে
‘আয়, ফিরে আয়।
এগোই সম্মুখে: একনায়কের সশস্ত্র সান্ত্রীর মতো শুষ্ক স্বপ্নশূন্য
গাছপালা, মৃত্যু-ঢালা দুর্বোধ্য নিস্তল পরিখার মতো নদনদী,
দুর্ভেদ্য প্রাচীরের মতো পর্বতপুঞ্জ আশ্চর্যকৌশলে ঘিরে ফেলে চতুর্দিক,
অথচ সান্ত্রী-পরিখা-দেয়াল পেরিয়ে অত্যন্ত সুদূরে ওড়ে
স্বপ্ন-ও আলো-পরা গভীর গোপনবাসী একবিন্দু আলোকিত পাখি!

সামনে এগোই, পেছনে চিৎকার রটে শূন্যতার স্তরেস্তরে-
আয়, ফিরে আয়।’

ফিরবো পেছনে? সম্মুখে তবু তো দোলে ভাঙা দিগ্বলয়, বিভগ্ন সূর্যাস্ত,
অসহায় পাখির পালক, স্বর্ণকঙ্কালের নাচ, যোনি-ও জরায়ু-হীন
ক্ষুধার্ত ভেনাস, দুঃস্বপ্ন-ধাতব শুষ্ক গাছপালা, সাস্ত্রী-পরিখা আর
ভয়াবহ দুর্ভেদ্য প্রাচীর; পেছনে একাধিপত্য করে শূন্যতা,
আর তার স্তরেস্তরে পুঞ্জিভূত আর্ত, শূন্য, মুমূর্ষু চিৎকার।