উদ্ভিদ

যে সকল বস্তু ভূমি, ক্ষেত্র, উদ্যান প্রভৃতি স্থানে জন্মে তাহাদিগকে উদ্ভিদ কহে; যেমন তৃণ, লতা, বৃক্ষ প্রভৃতি। উদ্ভিদ সকল যখন বাড়িতে থাকে তখন উহাদিগকে জীবিত বলা যায়; আর যখন শুকাইয়া যায়, আর বাড়ে না, তখন মৃত বলে। উদ্ভিদের জীবন আছে বটে, কিন্তু জন্তুগণের ন্যায় এক স্থান হইতে অন্য স্থানে যাইতে পারে না। উহারা যেখানে জন্মে সেই খানেই থাকে; এই নিমিত্ত উহাদিগকে স্থাবর কহে।

উদ্ভিদ সকল মূল দ্বারা ভূমি হইতে রস আকৰ্ষণ করে; সেই আকৃষ্ট রস মূল হইতে স্কন্ধ দেশে উঠে; তৎপরে ক্রমে ক্রমে সমুদায় শাখা, প্রশাখা ও পত্রে প্রবেশ করে। এইরূপে ভূমির রস উদ্ভিদের সর্ব্ব অবয়বে সঞ্চারিত হয়, তাহাতেই উহারা জীবিত থাকে ও বাড়ে। উদ্ভিদ যদি সূর্য্যের উত্তাপ না পায় তাহা হইলে বাড়িতে পারে না। শীত কালে রসের সঞ্চার রুদ্ধ হয় এই জন্য পত্র সকল শুষ্ক ও পতিত হয়। বসন্তকাল আগত হইলে পুনর্ব্বার রসের সঞ্চার আরম্ভ হয় তখন নূতন পত্র নির্গত হইতে থাকে।

বৃক্ষ, লতা প্রভৃতি উদ্ভিদগণের সমুদায় অবয়ব ছালে আচ্ছাদিত। ছাল আছে বলিয়া উহাদিগকে আঘাত লাগে না এবং পুষ্টি বিষয়েও অনেক আনুকূল্য হয়। যদি ঐ ছাল অত্যন্ত আঘাত পায় ভাহা হইলে উদ্ভিদ নিস্তেজ হইয়া পড়ে ও শীঘ্র মরিয়া যায়।

প্রায় সমুদায় উদ্ভিদেরই ফলের মধ্যে বীজ জন্মে। সেই বীজ ভূমিতে বপন করিলে তাহা হইতে নূতন উদ্ভিদ উদ্ভব হয়। কতকগুলি উদ্ভিদ এরূপ আছে যে উহাদের শাখা অথবা মূলের কিয়দংশ ভূমিতে রোপণ করিয়া দিলে নুতন উদ্ভিদ জন্মায়।

যে সকল উদ্ভিদ ফল পাকিলেই শুষ্ক ও জীবনহীন হয় উহাদিগকে ওষধি কহে; যেমন ধান্য, কলায়, যব ইত্যাদি। লোকে নিয়মিত কালে ভূমি খনন করিয়া ধান্য প্রভৃতির বীজ বপন করে। সেই বীজ হইতে গাছ জন্মে। পরে কালক্রমে ফল জন্মে। সেই সকল ফল পাকিয়া উঠিলেই গাছ শুকাইয়া যায়। অনন্তর সেই সকল গাছ কাটিয়া আনিয়া গাছ হইতে ফল পৃথক্‌ করিয়া লয়। এইরূপ ভূমিখনন বীজ বপন প্রভৃতি ক্রিয়াকে কৃষিকর্ম্ম কহে। কৃষিকর্ম্ম দ্বারা যে সমস্ত ফল লাভ হয় উহাদিগকে শস্য বলে।

আমরা প্রতিদিন যাহা আহার করি তাহার অধিকাংশ সামগ্রীই কৃষিকর্ম্ম দ্বারা উৎপন্ন। কৃষি দ্বারা ধান্য প্রভৃতি নানাবিধ শস্য জন্মে। তন্মধ্যে ধান্য হইতে তণ্ডুল, যব হইতে ছাতু, গম হইতে ময়দা; মুগ, মসূর, মাষ, মটর, অরহর, ছোলা প্রভৃতি কলায় হইতে দ্বিদল জন্মে। তিল, সর্ষপ প্রভৃতি কতকগুলি শস্য আছে তাহা হইতে তৈল পাওয়া যায়। ইক্ষু হইতে গুড়, চিনি, মিছরি হয়। শাক, পটল, আলু, মুলা, লাউ, কুমড়া, ফুটী, তরমূজ, ইত্যাদি খাদ্য সামগ্রীও কৃষিকর্ম্ম দ্বারা উৎপন্ন হয়। আম, কাঁটাল, জাম, আতা, পেয়ারা, বাদাম, কিসমিস্, দাড়িম, নারিকেল, ইত্যাদি নানাবিধ মিষ্ট ও সুস্বাদ ফল বৃক্ষ হইতে জন্মে। যেখানে এই সকল ফলের বৃক্ষ অনেক থাকে তাহাকে উপবন, উদ্যান ও বাগান কহে।

কৃষিকর্ম্ম দ্বারা কার্পাস জন্মে। কার্পাস এক প্রকার শস্য। কার্পাসের বীজ পৃথক্ করলেই তূল হয়; তূল হইতে সূত্র। তন্তুবায়েরা সূত্রে বস্ত্র প্রস্তুত করে; আমরা সেই বস্ত্র পরিধান করি। অতএব আমাদিগের পরিধান বস্ত্রও কৃষিকর্ম্ম দ্বারা লব্ধ হয়।