হলুদ বাঁটিছে মেয়ে

হলুদ বাঁটিছে হলুদবরনী মেয়ে,
হলুদের পাটা হাসিয়া গড়ায় রাঙা অনুরাগে নেয়ে।
দুই হাতে ধরি কঠিন পুতারে ঘসিছে পাটার পরে,
কাঁচের চুড়ী যে রিনিক ঝিনিকি নাচিছে খুশীর ভরে।
দুইটি জঙ্ঘা দুইধারে মেলা কাঠ-গড়া কামনার,
তাহার উপর উঠিতে নামিতে সোনার দেহটি তার;
মর্দিত দুটি যুগল সারসী শাড়িসরসীর নীরে,
ডুবিতে ভাসিতে পুষ্প-ধনুরে স্মরিতেছে ঘুরে ফিরে।

হলুদ বাঁটিছে হলুদবরনী মেয়ে,
রঙিন ঊষার আবছা হাসিতে আকাশ ফেলিল ছেয়ে।
মিহি-সুরী গান গুন গুন করে ঘুরিছে হাসিল ঠোঁটে,
খুশীর ভোমরী উড়িয়া শ্রীমুখ-পদ্মের দল লোটে।
বিগত রাতের রভস-সুখের মদিরা জড়িত স্মৃতি,
সারাটি পাটারে হলুদে জড়ায়ে গড়ায়ে রঙিছে ক্ষিতি।
গাছের ডালে যে বুলবুলি বসি ভরিয়া দুখানা পাখ,
লিখিয়া হইতে তারি একটুকু মেলিছে সুরেলা ডাক।

হলুদ বাঁটিছে হলুদবরনী মেয়ে,
হলুদে লিখিত রঙিন কাহিনী গড়াইছে পাটা বেয়ে।
ডোল-ভরা ধান, কোল-ভরা শিশু, বুক-ভরা মিঠে গান,
কোকিল-ডাকান আম্রছায়ায় পাতার কুটিরখান;
চাঁদিনী রাতের জোছনা আসিয়া গড়ায় বেড়ার ফাঁকে
কৃষাণ কন্ঠে বাঁশিটি বাজিয়া আকাশেতে প্রীতি আঁকে।
অর্ধেক রাত নকসী-কাঁথাটি মেলন করিয়া ধরি,
অতি সযতনে আঁকে ফুল-লতা মনের মমতা ভরি।
সুখ যেন আসি গড়াইয়া পড়ে, সূতার লতালি ফাঁদে,
মাটির ধরায় টেনে নিয়ে আসে গগনবিহারী চাঁদে।