উড়ানীর চর

উড়ানীর চর ধূলায় ধূসর
যোজন জুড়ি’
জলের উপরে ভাসিছে ধবল
বালুর পুরী।

ঝাঁকে বসে পাখি ঝাঁকে উড়ে’ যায়
শিথিল শেফালি উড়াইয়া বায়;
কিসের মায়ায় বাতাসের গায়
পালক পাতি’;
মহা কলতানে বালুয়ার গানে
বেড়ায় মাতি’।

(২)
উড়ানীর চরে কৃষাণ-বধূর
খড়ের ঘর,
ঢাকাই সীমের উড়িছে আঁচল
মাথার ‘পর।

জাঙ্‌লা ভরিয়া লাউএর লতায়
লক্ষ্মী সে যেন দুলিছে দোলায়;
ফাল্গুনের হাওয়া কলার পাতায়,
নাচিছে ঘুরি’;
‘উড়ানীচরে’র বুকের আঁচল
কৃষাণ-পুরী।

(৩)
‘উড়ানীর চর’ উড়ে যেতে চায়
হাওয়ার টানে;
চারিধারে জল করে ছল ছল
কী মায়া জানে।

ফাগুনের রোদ উড়াইয়া ধূলি,
বুকের বসন নিতে চায় খুলি’;
পদ ধরি’ জল কলগান তুলি’,
নূপুর নাড়ে;
‘উড়ানীর চর’ চিকচিক করে
বালুর হারে।

(৪)
‘উড়ানীচরে’ ছাড়-পাওয়া রোদ
সাঁঝের বেলা-
বালু লয়ে তার মাখামাখি করি’,
জমায় খেলা।

কৃষাণী কি বসি সাঁঝের বেলায়
মিহি চাল ঝাড়ে মেঘের কুলায়,
ফাগের মতন কুঁড়া উঠে যায়।
আলোক ধারে;
কচি ঘাসে তারা জড়াজড়ি করে
গাঙের পারে।

(৫)
‘উড়নীর চরে’ তৃণের অধরে
রাতের রাণী,
আঁধারের ঢেউ ছোঁয়াইয়া যায়
কী মায়া টানি।

বিরহী কৃষাণ বাজাইয়া বাঁশী,
কাল-রাতে মাখে কাল-ব্যথারাশি;
থেকে থেকে চর শিহরিয়া ওঠে,
বালুকা উড়ে;
উড়ানীর চর ব্যথায় ঘুমায়
বাঁশির সুরে।