উৎসর্গ

শ্রীগগনেন্দ্র নাথ ঠাকুর ও
শ্রীঅবনীন্দ্র নাথ ঠাকুর-
শ্রীচরণ কমলেষু

তোমরা দু’ভাই রঙ্ লয়ে কর রঙের খেলা
সন্ধ্যা সকাল, সকাল সন্ধ্যা সারাটি বেলা।
ছবি আর ছবি বরণে বরণে আসে ও যায়,
রেখার বাঁধনে কেউ ধরা পড়ে কেহ পালায়।
-রঙের সায়রে কমলেরা যেন খেলার জল,
কেউ ডুবে কেউ জলে ভেসে করে কৌতুহল।
তোমরা দু’ভাই তীরে দাঁড়াইয়া রও যে চেয়ে-
কি যেন কুড়াও, কি যেন হারাও, কি যেন পেয়ে।
তোমরা দু’ভাই রঙ্ লয়ে খেল রঙের নায়,
তরন মাণিক কুড়ায়ে ফিরিছে সুদূর গাঁয়।
কালেরে তোমরা মানিতে চাহ না,- নিকট-দূর
তোমাদের যেন মুঠার মধ্যে সকল পুর।

কেউ চ’লে যাও রূপকথাপূরে, রাজার কনে
ঘুমাইয়া হাসে হাসিয়া ঘুমায় আপন মনে।
তার সাথে যেয়ে ভাব করে আসো রেখার ডোরে,
তার মনে বাঁধো স্বপনের পর স্বপন ধরে।
কেউ কথা কও পাষাণের সনে, মোগলপূরী-
নানা বরণের লহরে লহরে হাসিছে ঘুরি।
মতিমহলের অজানা হারেমে বাদশাজাদী,
বেদনা তাঁহার পাষাণে পাষাণে ফিরিছে কাঁদি;
পাষাণে পাষাণে কান পেতে তাই শুনিছ খালি,
আপনার মনে রঙের উপরে রঙেরে ঢালি।
রঙের কুমার চেয়ে থাকি মোরা মুখের পানে,
এত কাছে রও তবু তোমাদের বুঝি না মানে।
তোমাদের বুকে কত রঙ্ আছে? আরো কি কায়া-
তোমাদের ঐ রঙের সায়রে দুলাবে ছায়া!
আরো কত ব্যথা আরো কত হাসি রয়েছে বাকি-
আজো দেখা তারা দেয়নি- যাদেরে লইবে আঁকি?

তোমরা দু’ভাই ছবি আঁকো বসি’- শুধুই ছবি,
কথা নাহি কও রঙে রঙ্ মাখো নীরব কবি।
ভাষার দেশেতে বসতি আমার, অবাক মানি,
তোমাদের সেই কথা-নাই-দেশ কেমন জানি!
সে যেন কেমন রঙে আর রঙে রেখায় রেখা-
টানিয়া টানিয়া মনের কথাটি মনেতে লেখা!
তোমাদের দেশ না জানি কেমন যেখানে সবে,
রঙের বাক্সে কথারে পুরিয়া রয় নীরবে।
সেই দেশে আজি পাঠাইয়া দিনু আমার গান-
তুচ্ছ এ তবু পূর্ণ প্রাণের পূজার দান।

১৩৩৭
গ্রাম, গোবিন্দপুর,
ফরিদপুর

আপনাদের স্নেহের জসীম।