বিচিত্রা

তোমারে নুতন করে’ হেরিব নয়ন ভরে’
তাই চির-পুরাণ’ এ আঁখি,
আলসে বিলাসে কাজে নিতি নব-নব সাজে
সাজাইতে চাহে থাকি-থাকি!
তুমি তাহে মর লাজে, কভু বুকে ব্যথা বাজে,
বুঝিতে পারনা তা যে, প্রিয়ে,
তাই মিছে কর রোষ পায়ে-পায়ে ধর দোষ,
শত প্রশ্ন সেই কথা নিয়ে!
শরতে সোনালি আলো চোখে মোর লাগে ভালো,
শেফালির বৃন্তরাঙ্গা বাসে
ঘেরিয়া ও অঙ্গখানি কি আনন্দ মনে মানি-
কহিতে পারিনা তাহা ভাষে;
বসন্তের লঘুবায় হৃদয়ের কিনারায়
যে হিল্লোল হানে আচম্বিতে,
রূপের মাঝারে তারে চক্ষু ভরি’ হেরিবারে
তোমারে চাহে সে মূর্ত্তি দিতে;
আষাঢ়ের মন্দ্রমাঝে যে ব্যথা গুমরি’ বাজে
সজল করুণ মূর্চ্ছনায়,
তারি শ্যাম বর্ণ ছানি’ মেঘলা বসনখানি
জড়াইতে অঙ্গে তব চায়!
এলো করি কালো চুল দুলাইয়া কর্ণদুল
সাজাইয়া ফুল-আভরণে,
শতবার শতরূপে চেয়ে দেখি চুপে-চুপে,
চোখে জল আসে অকারণে!

এততেও তৃপ্তি নাই আরো চাই আরো চাই-
ভাবের বিচিত্র দিক দিয়া,
সুখে দুখে লাজে ভয়ে অনুনয়ে অবিনয়ে
তোমারে হেরিতে চাই প্রিয়া;
তাই কভু সমাদরে টেনে লই অঙ্ক ‘পরে
চেয়ে দেখি মুদিত ও মুখ,
কভু বা কপট রোষে কাঁদাইয়া অসন্তোষে
ব্যথা দিয়া লভি নব সুখ;
সুগোপন আলাপনে ডেকে আনি সখীজনে,
সরমে মরিয়া যাও যবে,
লাজে রাঙ্গা সে বয়ান ছল ছল অভিমান
সে সুখের তুলনা কে কবে!
গুণ্ঠন খসায়ে টানি’ কুটিল কটাক্ষখানি
টেনে আনি চোখের সন্ধানে,-
সে আঘাতে মরে’ বাঁচি, সে মৃত্যুর কাছাকাছি
কোন তৃপ্তি মন নাহি জানে!

হেরি’ এ অশান্ত হিয়া তুমি মনে ভাব প্রিয়া-
নিতান্ত চপল এ যে, হায়!
সত্যই আমি যে তাই, চাঞ্চল্যের অন্ত নাই,
অপরাধ লইনু মাথায়।
নূতনের প্রলোভন ভুলায় এ মুগ্ধ মন,
আজীবন করিয়া স্বীকার,
তবু জানি মনে-মনে খ্যাতিহীন এ জীবনে
তুমি মোর প্রাণের সেতার!
বসন্তে বাহারে দেশে মল্লারে যোগিয়া বেশে
বিভাসে পরজে সোহিনীতে,
তুমি মোর বক্ষ ‘পরে বাজিও বিচিত্র স্বরে
নব-নব অপূর্ব সঙ্গীতে।