বৈশাখ

হে নবীন, হে বন্ধু বৈশাখ!
মহাকালকুণ্ডলীর আজি তুমি খুলিলে যে পাক
নূতন করিয়া ধরণীতে,
সে যেন প্রত্যক্ষ হয় ভারতের অদৃষ্ট-গ্রন্থিতে।
উদ্দেশ্য তোমার নাহি জানি;
তবু যেন মনে হয়, একটী বন্ধন নিলে টানি’
লাঞ্ছিতের চিরনাগপাশে;
মুক্তির ইঙ্গিত যেন আজিকার মুক্তাকাশে ভাসে;
তোমার প্রখর রৌদ্রালোকে
পুঞ্জ অন্ধকার যত, মিথ্যা হয়ে দেখা দেয় চোখে!
শীতের শিশির-শীর্ণ আশা-
বসন্তের বনে সাহা পুষ্পমুখে পেয়েছিল ভাষা,
আজি হেরি, তোমার পরশে
পরিপূর্ণ ফলরূপে ভরিয়া উঠিতে চায় রসে;
বিমুগ্ধ মলয় অবসানে,
উষ্ণ সমীরণ তব তন্দ্রাবেশে জাগরণ হানে;
সুচিরসঞ্চিত বাষ্পরাশি,
তোমার প্রথম মেঘে বৃষ্টিরূপে দেখা দেয় আসি’;
তপক্লিষ্ট তব মৃত্তিকায়
তোমারি আশীষ লভি’ সিদ্ধি-শস্য অঞ্চুরিতে চায়।
প্রশান্ত অথচ ভয়ঙ্কর
হে বৈশাখ, পশুপতি শিব তুমি- পিনাকী শঙ্কর।
রোদ্ৰশুভ্র নগ্নদেহ তব
সৃষ্টির আনন্দে ভরা রুদ্রতার মূর্তি অভিনব।
ধ্বক্ধ্বক দীপ্ত নেত্রত্রয়,
অতীতে করিয়া ধ্বংস বিশ্বেরে বাঁচাও মৃত্যুঞ্জ্যয়।
স্কন্ধে মৃতকালকল্পা সতী,
ভবিষ্যৎ অক্ষি আগে গৌরীরূপে করিছ প্রণতি
মহাকাল চরণের পরে;
প্রসন্ন হাসিতে তুমি তাহারে বরিছ সমাদবে

হে বান্ধব, হে শুভ বৈশাখ,
সুদীর্ঘ বৎসর অন্তে এলে যদি, কেন মৌনবাক?
তোমার ও চরণের কাছে
নীরবে ফেলিব বলে’ কত অশ্রু বুকে জমে’ আছে!
হে আচাৰ্য, কর উপদেশ,
বন্দীব বন্ধন কবে স্পর্শে তব সত্য হবে শেষ;
বঞ্চিতের সঞ্চিত বেদনা
সঙ্কল্পের দৃঢ়তায় লভিবে সে নূতন চেতনা,
পেয়ে তব অমৃতের ধারা;
অন্তরে বাহিরে কবে মুক্ত হবে অন্ধকার কারা!

তব কাল বৈশাখীর ঝড়ে
সর্ব্ব অপরাধ গ্লানি উড়ে’ যাক্ শুভঙ্কর বরে,
লভিয়া তোমার সংমার্জ্জনা-
অন্ধকার কোণ হ’তে বজ্জনায় যত আবর্জ্জনা।
পুঞ্জীভূত দুর্বলের ভয়
তোমার মাভৈঃ মন্ত্রে হে বীর করিয়া যাও জয়
এবারের নব অভ্যুদয়ে;
জন্মান্ধ-সংস্কার যদি ব্যথা পায় সে দৃপ্ত বিজয়ে,
তবু তারে তুচ্ছ ধুলি সম
ফুৎকারে উড়ায়ে দাও আগন্তুক হে প্রিয় নিম্মম!

শিখাও নবীন কর্ম্মগীতা,
কি হবে করিয়া শোক, নির্বাপিত আজি চৈত্র-চিতা
পুরাতন বর্ষে করি’ গত;
শেষ করে’ দিয়ে তার ভূল ভ্রান্তি অপরাধ যত।
সেই শেষ-ভস্ম মাখি’ গায়ে
এস এস হে বৈশাখ, বীজমন্ত্র চৌদিকে ছড়ায়ে-
আকাশে বাতাসে দিশে দিশে
অণু পরমাণু হয়ে দিকে দিকে যাক্ তাহা মিশে’;
তারি ফলে হে ভাগ্যবিধাতা!
ঘরে ঘরে হোক খোলা নূতন কৰ্ম্মের হাল-খাতা।