দেয়ালী

বন্ধু, তুমি আচ্ছা মানুষ-
এমন খেয়ালী!
তোমার, দেখি, সকল কাজই
পরম হেঁইয়ালী;
আজকে রাতে ঘরে-ঘরে
জ্বল্ছে বাতি থরে-থরে;
দীঘির জলে গাছের ‘পরে
আলোর দেয়ালী।
তোমার ঘরই আঁধার শুধু-
কেমন খেয়ালী!

পথের ধারে কাতার-বাঁধা
সৌধশিখরে,
হাজারতর মালায়-গাঁথা
আলোক ঠিকরে;
গরীব যারা কুটীরবাসী,
তাদের ঘরেও আলোর হাসি,
তুমি এমন উদাস হয়ে
রইলে কি করে’?
চারিধারে দীপের হারে
দীপ্তি ঠিকরে!

আল্তে পথে এম্নি চমক
লাগ্ল আঁখিতে,
তোমার গৃহ শুধাই সবে
নয়ন থাকিতে!
কেউ বা শুনে’ অবাক মানে,
কেউ বা চাহে মুখের পানে,
কেউ বা কুটিল দৃষ্টিটি তার
চায় না ঢাকিতে!
এম্নি পথে আলোর ধাঁধা
লাগ্ল আঁখিতে!

অনেক খুঁজে’ এলাম যদি,
সে এক ভাবনা-
অন্ধকারের আড়াল ভেদি’
যাই কি- যাব না!
এমন সময় আঁধার ঠেলে’
যেমন করে’ কাছে এলে,-
তেমন করে’ আসা যে আর
কোথাও পাব না!
এক নিমেষে ভুলিয়ে দিলে
সকল ভাবনা।

ভেবেছিলে হয়ত মনে-
বাহির দুয়ারে,
অমারতের আগল এঁটে
ছল্ব উহারে!
বাহির দেখে’ ভয় কি মানি,
মন যে তোমার মনে জানি;
প্রীতির আলো জ্বলছে যেথায়
জ্যোৎস্না-জুয়ারে;
অন্ধকারের পরদা ঘিরে’
ছল্বে উহারে?

ওগো আমার দুঃখরাতের
আঁধার সরণী!
ভিড়াও তোমার আপন ঘাটে
প্রাণের তরণী।
কিসের ক্ষতি অন্ধকারে,
মন যদি মন চিনতে পারে-
এক নিমেষে উঠবে হেসে
আমার ধরণী;
ওগো প্রাণের দীপান্বিতা-
হৃদয়হরণি।