কর্ম্ম

শক্তিমায়ের ভৃত্য মোরা- নিত্য খাটি নিত্য খাই,
শক্ত বাহু শক্ত চরণ, চিত্তে সাহস সর্ব্বদাই;
ক্ষুদ্র হউক তুচ্ছ হউক, সর্ব্বসরমশঙ্কাহীন-
কৰ্ম্ম মোদের ধৰ্ম্ম বলি’ কৰ্ম্ম করি রাত্রি দিন।

চৌদ্দ পুরুষ নিঃস্ব মোদের- বিন্দু তাহে লজ্জা নাই,
কৰ্ম্ম মোদের রক্ষা করে, অর্ঘ্য সঁপি কর্মে তাই;
সাধ্য যেমন শক্তি যেমন’- তেম্নি অটল চেষ্টাতে
দুঃখে-সুখে হাস্যমুখে কৰ্ম্ম করি নিষ্ঠাতে।

কর্ম্মে ক্ষুধায় অন্ন যোগায়, কর্ম্মে দেহে স্বাস্থ্য পাই,
দুর্ভাবনায় শান্তি আনে- নির্ভাবনায় নিদ্রা যাই;
তুচ্ছ পরচর্চাগ্লানি-মন্দ ভালো কোনটা কে-
নিন্দা হতে মুক্তি দিয়ে হাল্কা রাখে মনটাকে।

পৃথ্বিমাতার পুত্র মোরা, মৃত্তিকা তাঁর শয্যা তাই,
শষ্পে তৃণে বাসটি ছাওয়া, দীপ্তি হাওয়া ভগ্নী ভাই;
তৃপ্ত তাঁরি শষ্যে-জলে ক্ষুৎপিপাসা দুঃসহ,
মুক্ত মাঠে যুক্তকরে বন্দি তারেই প্রত্যহ।

পক্ষীপ্ৰাণী, নিত্য জানি, শ্রম বিনা কার খাদ্য হয়,
সুদ্ধ মানুষ ভিন্ন- সে কি বিশ্ববিধির বাধ্য নয়!
চেষ্টা ছাড়া অন্ন যে খায়’- অন্যে তারে বল্বে কি,
ভিক্ষুকেরও ঘৃণ্য তারে গণ্য করা চল্বে কি?

ক্ষুদ্র নহি তুচ্ছ নহি- ব্যর্থ মোরা নই কভু-
অর্থ মোদের দাস্য করে, অর্থ মোদের নয় প্রভু;
স্বর্ণ বল’ রৌপ্য বল’ বিত্তে করি জন্মদান,
চিত্ত তবু রিক্ত মোদের নিত্য রহে শক্তিমান।

কীর্তি মোদের মৃত্তিকাতে প্রত্যহ বয় মুদ্রিত,
শূন্য’পরে নিত্য হের’ স্তোত্র মোদের উদগীত;
সিন্ধুবারি পণ্য বহি’ ধন্য করে তৃপ্তিতে,
বহ্নি মোদের রুদ্ৰ প্ৰতাপ ব্যক্ত করে দীপ্তিতে।

বিশ্ব যুড়ি সৃষ্টি মোদের, হস্ত মোদের বিশ্বময়,
কাণ্ড মোদের সর্ব ঘটে কোন্খানে তা দৃশ্য নয়?
বিশ্বনাথের যজ্ঞশালে কৰ্ম্মযোগের অন্ত নাই,
কর্ম, সে যে ধৰ্ম্ম মোদের- কৰ্ম্ম চাহি- কৰ্ম্ম চাই।

ঠাট্টা করুক ব্যঙ্গ করুক লক্ষী-পেঁচার বাচ্ছারা-
পার্ব্বেনোক কর্তে মোদের কর্ম্মদেবীর কাছ-ছাড়া;
শান্তিভরা দৃষ্টি যে তার জ্বলছে মোদের অন্তরে,
শঙ্কা-সরম ডঙ্কা মেরে তুচ্ছ করি মন্তরে।

মাতৃভূমি! পিতৃপুরুষ! কৰ্ম্মে যেন দীক্ষা হয়;
রুদ্রস্বরে গর্জ্জি’ বল’- ভিক্ষা নহে, ভিক্ষা নয়।
হস্ত যখন অঙ্গে আছে, সঙ্গে আছেন শক্তিময়,
কৰ্ম্ম-ছাড়া অন্য কা’রে কর্ব মোরা ভক্তিভয়?