অনাহুত

সকলের চেয়ে অল্প আলাপ-
সব চেয়ে কম জানাশোনা তার সাথে,
বারেক মাত্র পলকের দেখা
আয়োজনহীন দৈবেব ঘটনাতে;
একটি বা দু’টি অতি ছোট কথা
অতীব সহজ- তার চেয়ে বেশী নয়-
সেও বহুকাল, কবে বা কোথায়-
ঠিক মনে নাই- ভূলে’ গেছি পরিচয়।

তখন তরুণ- নয়ন করুণ;
কত দিনরাত চলে’ গেছে তারপর,
আঁধারে আলোকে বিষাদে পুলকে
কালের চক্র হয়েছে অগ্রসর;
কত সুখদুখ কত বিস্ময়
কত আকাঙা কত না অন্তরায়-
কত কণ্টক বিঁধিয়াছে মনে
কত কঙ্কর ফুটিয়াছে পায়-পায়।

পথের সঙ্গী কত না পান্থ
এসেছে গিয়েছে কতদিন কতবার,
কাহারো সঙ্গে ক্ষণিকের দেখা,
কেহবা আজিও ছাড়েনিক অধিকার;
পেতে পেতে কেউ হারায়ে গিয়াছে,
পেয়ে কেউ গেছে রেখাটি রাখিয়া মনে,
কাহারো বা শুধু দেখাই পেয়েছি,
পাওয়া আর তারে হয় নাই এ জীবনে।

দুখ-দুর্দিন নামিয়াছে যবে-
বেদনা-বাদল পরাণ ফেলেছে ছেয়ে,
বলিনা এ কথা- কোন প্রিয়জন
বাহুবন্ধনে বাঁধেনি নিবিড় স্নেহে;
তবু তারি মাঝে, জানিনা কেমনে,
চকিতের মত পড়েছে নয়নপাতে-
সেই সব চেয়ে অল্প আলাপ-
সব চেয়ে কম পরিচয় যার সাথে!

সুখ বলে যারে ইহসংসারে-
পাইনি কখনো, তাইবা কেমনে বলি!
বুকের মাঝারে তুফান জেগেছে-
চোখের মাঝারে আগুন উঠেছে জ্বলি’;
শিরায় শিরায় শশাণিত ছুটেছে-
তারি মাঝে তবু সহসা পড়েছে মনে-
সেই তারি কথা- দেখা শুধু যার
বারেকমাত্র মিলিয়াছে এ জীবনে!

শান্ত প্রভাতে স্তব্ধ দুপুরে,
ঘন বর্ষায় রাত্রি-অন্ধকারে,
নির্জনে একা কিংবা যখন
স্নিগ্ধ স্বজন ঘিরিয়াছে চারিধারে,;-
বিজলীর মত ছলকি-ঝলকি’
চিত্ত-আকাশে যায় সে মুরতিখানি-
সব চেয়ে কম চেনা যার সাথে-
সকলের চেয়ে অল্প যাহারে জানি!

ঘর্ঘরি’ ঘুরে কর্মচক্র-
কে যেন চকিতে চাহিল মুখের পানে;
জপিতেছি বসি’ ইস্টমন্ত্র-
ফিস্-ফিস্ স্বরে কেবা কি কহিল কানে!
স্বপ্নের মত প্রেমের মতন
বিচিত্র সেই পাগল দেশের হাওয়া-
পাওয়া বা’- তাহারে ভুলাইয়া দেয়-
নিমেষের মাকে না পাওয়ারে করে পাওয়া!

নাই কি সে আজ? চাই কি তাহারে?
মনেরে লুকায়ে ভাবি কি তাহারি কথা?
অভাবে তাহার পাই কি বেদনা-
অমিলনে তার পুষি কি গোপনে ব্যথা।
তাই বা কেমনে বলিব আজিকে?
নয় নয়, ওগো! তাও যে সত্য নয়,-
তবে কেন এই নিভৃত মনের
রঙ্গমঞ্চে অকারণ অভিনয়?

খুঁজিনাই কভু জন্মান্তর-
খুজিলে হয় ত সঙ্গতি মিলে তার,
বুঝি নাই ভালো সুকৃতি অকৃতি,
সঙ্গের সাথী- হয় যা সহজে পার;
শুধু বুঝি- এই জীবনের সাথে
কোন্ অজ্ঞাতে বেঁধে দেয় কে বা ফাঁস,
কৌতুক যার সত্যের মত
মৰ্ম্মে-মর্ম্মে বিস্তারে নাগপাশ।