প্রেমের কথা

বাস্তে ভালো পারব কি না তারে-
সত্যি কথা শুন্তে যদি চাও,
পারবেনা রাগ কর্ত্তে আমার ‘পরে,
আগে আমায় সেই কথাটা দাও।
নিত্যি ভালো বাসছে ত সব লোকে,
শক্ত কথা কি আছে এর মাঝে,
বল্ছ বটে,- তাইতে আরো আজ
দ্বিগুণ ব্যথা বক্ষে আমার বাজে!

ভালবাসি বল্ব কেমন করে’?
বাস্তে ভালো চক্ষে আসে জল;
ভালবাসার অর্থ জেনেছি যে,
তাই সে কথা বল্তে নাহি বল!
অভিনয়ের লোভ আছে যার মনে,
অসত্যে যার মিটেনিক সাধ,
করুক সে জন প্রেমের দেবতারে
কপট সেবার অটুট অপরাধ।

ভালো যারে বাসব মনে প্রাণে,
দুর্দশা তার দেখ্ব বেঁচে চোখে?
বাপের ভিটা রইবে তাহার বাঁধা
বান্ধবেরা লাঞ্ছিত তার লোকে!
আঁচল পেতে পথের ধারে বসে’
ভিক্ষা-অন্নে রাখ্বে সে তার প্রাণ,
তবু তারে বলব ভালবাসি,-
হায়রে, ভালবাসার অভিমান!

যে কেহ যার প্রেমের পাত্র হেথা,
দেবতা সে প্রেমের মন্ত্রে তার,
তুচ্ছ হলেও সে যে তাহার রাণী,
বিশ্বে যে তার স্বাধীন অধিকার!
হে অভাগ্য শক্তিহারা নিজে,
দুর্ব্বলতায় আপ্নি মৃতপ্রায়,
সে অক্ষমও বলবে ভালবাসি-
ধিক্কৃত তার কাপুরুষতায়!

ভালবাসা সতেজ মাটির ফল,
ভালবাসা মুক্ত হওয়ার ফুল,
ভালবাসা অসীম পারাবার,
নাইক তলা নাইক তাহার কূল!
পায়ের তলায় গর্তে যাহার বাস,
সম্বন্ধ তার থাক্তে অন্য পারে,
প্রেমের কথা সে যেন না বলে,
প্রেম নাহি তার চতুঃসীমার ধারে!

বাহুর শক্তি রয়েছে যার বাঁধা,
চোখের জ্যোতি গিয়েছে যার কেঁদে,
নির্জীবতার অটুট নাগপাশে
আষ্টে-পৃষ্ঠে রেখেছে যা’য় বেঁধে;
তার কাছে আর প্রেমের উঁচু কথা
তুলোনাক, ধরি তোমার পায়,
অন্ধ চোখে অশ্র দেখা সে যে-
ব্যথার উপর ব্যথাই বেড়ে’ যায়!

আপন মাকে মা বলতে যে নারে,
আপন ভায়ে ডাক্তে সাহস নাই,
বোনর লজ্জা দাড়িয়ে যেজন দেখে,
আপন ঘরে পর যে সর্ব্বদাই;
ধর্ম যাহার পরের পায়ে ধরা,
কৰ্ম্ম যাহার পয়সা দিয়ে কেনা,
মৃত্যুকে সে বাসুক ভালো শুধু
চুকিয়ে দিতে বিশ্বদেবের দেনা!

লিখুক কবি ছন্দে এবং গানে,
আঁকুক ছবি মুগ্ধ চিত্রকর,
গল্পলেখক রচুক বসে’ পুথি,
পাঁচশ’ পাতায় পূরিয়ে কলেবর;
ঘরে-ঘরে রাত্রে এবং দিনে
যতই তোড়ে চলুক অভিনয়,
তবু আমি বলব তোমার কাছে
প্রেমের কথা মোদের তরে নয়।