সত্যেন্দ্রনাথ

ওগো ছন্দের খেয়ারী, তোমার
এ আবার কোন অশেষ অপার ছন্দ!
পশ্চিমাকাশে রবি ডুবে’ যায়,
অন্ধকারায় ধরণী হারায়-
এই ত সময়- এরি মাঝে খেয়া বন্দ!
কবিদল তব কাব্যের তীরে-
মুগ্ধনেত্রে চাহে ফিরে’-ফিরে’-
সন্ধ্যা-আঁধারে মনে লাগে মহা ধন্ধ;
পারের সময় অপারগ করি’ ছন্দে করিলে বন্দ

নূতন তানের তানসেন
সচ্ছন্দের তুমি যে ছন্দরাজ!
মৌন নিরাশা করিবারে দূর,
রুদ্র দীপকে ধরেছিলে সুর-
দহিয়া তোমারে হ’ল তা বন্দ আজ!
সে সুর-সুরভি হিয়ার পাতায়
জাগরণ হানি তাতায় মাতায়-
গীতনিকুঞ্জে তুমি যে গন্ধরাজ!
সকল ছন্দে হারাইল তব মরণ-ছুল আজ।

কোন্ নন্দনে চলিলে বন্ধু,
ছন্দসুরের চিরতরে কাটি বন্ধন’?
ফুলের ফসল ছাড়ি’ এ ধরার
বন্দিছ আজ কোন অমরার
পারিজাত আর মন্দার হরিচন্দন?
বান্ধবদল এপারের তীরে-
হের’ সবে আজি তিতি আঁখিনীরে
পাঠায় তোমারে অভিমান-ভরা ক্রন্দন;
চুমুরের সঙ্গে সবারি নিমেষে কাটিলে বন্ধন!

বঙ্গননী- যারে তুমি কবি,
সদাজাগ্রত বচনে মনে ও কর্ম্মে,
সবার অধিক করিয়াছ সেবা,
প্রাণেরও অধিক ছিল তব যেবা-
একক দেবতা ছিল যে তোমার ধৰ্ম্মে;
সেও আজি হের, বিয়োগ-অধীর-
আষাঢ়ের মেঘে ঝরে আঁখিনীর,
তাহারো মমতা কাটিলে কঠিন মর্ম্মে-
বঙ্গজননী, একক দেবতা ছিল যে তোমার ধর্ম্মে।

তবে তাই হোক- যাও কবি তুমি
সরস্বতীর চরণকমলকুঞ্জে,
চিরকুহুকেকা বিরাজে যেথায়,
তীর্থের রেণু বহে মলয়ায়,
কবিদল যার গুণ্গুণ্ গাহে গুণ্ যে!
মায়ের মুখের প্রসন্ন হাসি
নিশিদিন যেথা আছে পরকাশি,
ভক্তেরা সেই চিরসুধাধারা ভুঞ্জে-
অমরসমান লভ যশোমান বাণীর চরণকুঞ্জে।