স্বরূপ

আমি বসনে বদন ঢাকিব না, তুমি
ভুল দেখ মোরে পাছে;
মোর ললাটপ্রান্তে কোথায়, কি জানি-
কলঙ্ক-তিল আছে!
তাই আমি সদা ভয়ে-ভয়ে থাকি,
যারে-তারে দেখে লাজে মুখ ঢাকি;
অন্তর মোর ছাড়া-পাওয়া পাখী
যায় না কাহারও কাছে-
আজ ধরা পড়িয়াছে যখন, সে কথা
না বলিয়া সে কি বাঁচে।

বুঝি ছিল একদিন আঁখিতারা তার
চঞ্চল খঞ্জন,
ভুলে হয়ত সেদিন পরেছিল চোখে
মোহন মোহাঞ্জন!
নীল আকাশের বিল হ’তে ফিরে’
সেদিন পশিতে চায়নিক নীড়ে,
কোন্ ভুলো’ হাওয়া করেছিল ধীরে
সঙ্কোচ ভঞ্জন;
বুঝি ভেঙেছিল ভয় মদবিহবল
অলিকলগুঞ্জন!

এবে নাহিক সে দিন, বসন্ত আজ
কুয়াসার মাঝে হারা,
হের বাতাসে আজি সে উত্তাপ নাই,
শ্যামার নাহিক সাড়া;
লতায় পাতায় গুল্মে ও গাছে,
রিক্ততা আজ বাসা বাঁধিয়াছে;
শিশিরশীতল আকাশের মাঝে
সঙ্কোচে চাহে তারা-
এই বসন্তহীন দুর্দিনে চোখে
মুছাতে আসিলে ধারা!

তাই স্বরূপ আজিকে দেখাব তোমায়-
ভালবাস যদি, বাস’,
দেখে চোখে যদি আজ অশ্রু শুকায়,
মনে-মনে যদি হাস’;
তবু জানাইব- যা নাই, যা আছে,
দিনশেষে আজ এলে যদি কাছে;
শেষ সাধ তার এই শুধু যাচে-
সন্দেহ তার নাশ’;
পোড়া রূপের সতীনে ভালবাসিওনা,
পার, তারে ভালবাস’!