শ্রাবণী

কোথায় চলেছ তুমি নিরাভরণে-
ঘন নীল শাড়ীখানি পরা’ পরণে।
সমুখে দেখ না চেয়ে
চলেছে গোপের মেয়ে-
কতনা ভূষণ বাজে করে চরণে;
তুমি চলিয়াছ শুধু নিরাভরণে।

কেহ বা শ্যামলী শ্যামা কেহ বা গোরী-
ছলকি-ঝলকি’ রূপ পড়িছে ঝরি’;
আধারে তনুটি ঢাকি’
চমকিছ থাকি-থাকি’-
সবারে এড়ায়ে চল সুদূরে সরি’;
মেঘেতে বিজলী-আভা রহে আবরি।

সকলেরি চোখে মুখে কত না হাসি,
তোমারি নয়ন কেন যেতেছে ভাসি’?
যার যাহা মনে আসে-
কথা কয় হাসে ভাবে,
আননে হিয়ার আশা উঠে উছাসি’,-
তোমারি নয়ন কেন যেতেছে ভাসি’?
গরজি’ শ্রাবণ-দেয়া ভ্রুকুটি হানে,
পবন মেতেছে সাথে কেন কে জানে!
ঝর ঝর ঝরে জল-
বন পথ পিচ্ছল,
চঞ্চল গোপীদল মানা না মানে;
আগুসরি’ চলে তবু সুদূর পানে!

কোথায় বেজেছে বাঁশী যমুনাকূলে-
কোথা কোন্ ফুলে-ভরা কদমমূলে;
তাই বুঝি দলে দলে
গৃহ ত্যজি’ সবে চলে;
তুমিও কি চল সেথা বাঁশীতে ভুলে’-
কালো জলে ভরা সেই যমুনা কূলে!

অদূরে তমালবনে ঘনা’ল কালো’-
সবারে এড়ায়ে একা চলা কি ভালো?
ত্বরা চলি’ লই সাথ,
নিবিড় শ্রাবণ রাত-
কি করি’ চিনিবে একা পথ ঘোরালো;
কালো কি তোমার চোখে দেখালো আলো?

ওগো সাহসিকা, কথা কহ একবার
বারেক জানাও শুধু বেদনা তোমার।
জানি সে পাগল ডাকে
কেবা কোথা ঘরে থাকে!
লাজ মান ভয় সব হয় পরিহার;
চোখে তবে জল কেন, কি ব্যথা তোমার?

তুমি কি রাজার মেয়ে- তুমি রাধিকা।
কানুর প্রণয়ে কেনা চিররাধিকা।
রতন ভূষণ সাজে
তোমার কি যাওয়া সাজে,
তুমি যে কালার দাসী সেবাসাধিকা,-
তাই আভরণহীনা তুমি রাধিকা!

গোপীর আননে হাসি হেরিয়া হরি
হরষে বসায় পাশে আদরে ধরি’;
সোহাগ জানায়ে শেষে
বিদায় করিবে হেসে,
তোমার চোখের বারি মুছতে, মরি!
কঁদিয়া সাধিবে সে যে রজনী ভরি’।

নীলবাসে ঢাকা তনু যাহার তরে,
সে নীল হেরিবে তাহা নয়ন ভরে’।
অতুল সে প্রেমখানি
সফল হইবে, জানি-
নীলমণি বুকে সারা যামিনী ধরে’;
হরষে ব্যথায় তারো নয়ন ঝরে!

প্রণয় যে হাসি নয়, শুধু আঁখিজল,
পলকে হারায় সে যে- পলকে বিকল
তোমার প্রাণের হরি
জানে যে তা ভালো করি’;
চেনে সে প্রাণের সেবা, তাই সে পাগল-
তোমারি প্রেমের লাগি’ খোঁজে নানা ছল।