১৩৩৬-৩৮ স্মরণে

অনেক চিন্তার সূত্র সমবায়ে একটি মহৎ দিন
এখানে গঠন ক’রে যেতেছিল কয়েকটি স্থির সমীচীন
যুবা এসে; কোথাও বিদ্যুৎ নেই- তবুও আগুন যেন ধীরে
জ্বলেছিল এই হরীতকী-কুঞ্জে মাঘের তিমিরে;
ভোর এল; ভারুই-পাখির মতো তবু কেউ হয় নি ক’ আকাশে উড্ডীন।

উড়িবার কাজ সব আগন্তুক বৃহৎ চিলের তরে রেখে
অনেক আশ্চর্য শ্লোক খোঁজা হল ভারতীয় মনীষার থেকে;
যেন সব অমেয় সুদূর বৃক্ষে বাতাসের সঙ্গীতের মতো:
আমাদের সচেতন তাড়নায় প্রাণ পেয়ে জেগেছে ফলত;
চোখ ক্লান্ত হয়, তবু নখের ভিতরে হিম, নিরুত্তর দর্পণকে দেখে।

তবু সেই অপার্থিব সুর কেউ ভুলে যেতে পারে?
দুই কানে মোম ঢেলে শুনিতে চাই নি যাহা মধ্য-সমুদ্রের অন্ধকারে
আমাদের কাছে ছিল সে-দিন তা জাঞ্জিবার-সমুদ্রের অই পারে- কাম;
তাহারে এড়াতে গিয়ে করেছি অদ্ভুত প্রাণায়াম;
যেমন প্রবীণ তার যৌবনের প্রেম ঢেকে রাখে চোখ-ঠারে।

এখানে হলুদ ঘাসে- কাঁকরের রাস্তায়- নোনা-ধরা দেয়ালের ঘরে
হৃদয়ে গঞ্জনা এক জেগেছিল বৃশ্চিকের মতন কামড়ে
এ-পৃথিবী পাক খায়- তবু কেউ কনুইয়ের ‘পরে রাখে ভর
যেন স্পষ্ট সৌর-জগতের এক সুশৃঙ্খল কেন্দ্রের ভিতর
রয়েছে সে; অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড যেন সন্ধ্যার হাঁসের মতো ফিরে আসে ঘরে।

ঘরের হরিণ পারে অনায়াসে চ’লে যেতে গৃহস্থের গোধূম মাড়িয়ে।
সেই পথ থেকে তবু স’রে গিয়ে অন্য-এক অহঙ্কার নিয়ে
কয়েকটি যুবা, নারী,- সমাহৃত হয়ে গিয়ে ছুরির ফলায়
এখানে বাটের দিকে চেয়েছিল;- কার যেন স্থির মুষ্ঠি টের পাওয়া যায়:
যেন সব নাশপাতি পৃষ্ঠব্রণ হয় তার নিটোল ব্লেডের মুখে গিয়ে।

আজ জানি সমবায়ে উদয়ন, নাগার্জুন, পুষ্পসেনী ছাড়া-
কী রয়েছে এই সব নাম ছাড়া?- সুনিপুণ ভাবনার ধারা
কে বুঝেছে সব নয়?- জনতার হৃদয়ের ভীতি
মেধা নয়- সেবা চায়;- তাই ভেঙে ধ্ব’সে গেল অমোঘ সমিতি;-
অন্বীক্ষার উচ্চারণে রয় কি হাঁসের ডিম মৃত্তিকায় খাড়া?

আকাশরেখার পারে তবুও যাহারা এই পথে এসে আবার দাঁড়াবে-
প্রকম্পিত কম্পাসের সূচীমুখ খানিক স্থিরতা যেন পাবে
তাদের ছোঁয়াচে এসে;- যদিও পাথরগুলো হয়ে গেছে আবার প্রাচীন
নিওলিথ পৃথিবীর;- এই সব ঘাস, হরীতকী, সূর্য- মনে হয় যেন প্লিওসিন
হাড়গোড় প’ড়ে আছে নিরুত্তেজ মানুষের প্রেমের অভাবে।