এ-পৃথিবী ঘুরে যায়

এ-পৃথিবী ঘুরে যায়- অন্ধকারে- আলোর ভিতরে
সেই সব আদি আরণির দিন
সে-সব আদিম সরলতা
সূর্যের আলোয় স্বচ্ছ নদীর জলের মতো প্রেম
শিশুর মতন আশা হারায়ে ফেলেছে আজ মানুষেরা
জটিল আয়ুর স্তরে উঠে এসে বিবর্ণ, বিকীর্ণ পৃথিবীতে
যেন কোনও পুরুষের হাতে লোল বাটখারা তুলে দেওয়া হল
অন্য এক রমণীর হাতে এক সঙ্কুল ববিন
তাহাদের স্বেদ নাই- সুপ্তি নাই
মৃত্যু তাহাদের কাছে হয়ে গেছে দৈবপরাধীন।

আমাদের বহুলতা বেড়ে গেছে ঢের
মরণের কাছে আছে গুটি দুই-চার সাদা কথা
প্রভাতের আলোকের মতো এক নিট সফলতা।
আমাদের কৌতূহল, পরিশ্রম, আকীর্ণ জীবন
মরণকে অতিক্রম ক’রে গেছে তবু
আজ এই পৃথিবীতে আমরাই জীবনের-ভিতরে-মরণ
আমরাই মরণের-ভিতরে-জীবন।

এইখানে- এইখানে নিটোল মৃত্যুর পরাজয়
মৃত পারসি’র সব অবিকল মাংস খেয়ে ফেলে
শকুনেরা ব’সে থাকে আকাশের অবলঙ্ ছবির মতন
মৃত হিন্দু’র চিতা ভুলের বুনুনি পুড়ে ফেলে
উড়ে যায় জ্যোতিষ্কের বিম্বের মতন
যেন এক মদির, সম্বদ্ধ, গর্হিত ভূমিকায়
মৃত খৃস্টানের সব কবরের সাদা ক্রুশে- মাথার উপরে
প্রভাতের আলো এসে পড়ে

চেয়ে দেখে সমাকুল হয়ে তবু কেঁপে ওঠে আমাদের জারজ হৃদয়
অত গাঢ় সরলতা পৃথিবীতে এক-দিন বেঁচেছিল- হয়তো-বা
সে-পৃথিবী আজ আর নেই।
তবুও কেমন হবে আমাদের সকলের অন্যবিধ আর-এক কবর?
কবরের গল্প নিয়ে আমাদের কেউ
ব’সে নেই;- বস্তুত দুয়ার খোলা রয়ে গেছে, দেখি,- কক্ষের
ঢুকে পড়ি- ও-দিকে দুয়ার খোলা রয়ে গেছে নির্গমনের
বার হয়ে চ’লে যাই।

এখন পায়ের নিচে আমাদের
মৃত্তিকার তরঙ্গেরা
অব্যয়ের পরিত্যক্ত ঢিবির মতন
পৃথিবী যেতেছে কেটে ক্রমশই
হয়তো পায়ের নিচে আমাদের

পৃথিবী সমাপ্তি চায় সূর্যের কাছে
সূর্য সমাপ্তি চায় ব্রহ্মাণ্ডের পারে
তবুও তাদের কাজ সমাপ্ত হবে কি কোনও দিন?
অসমাপ্ত রয়েছে কি স্বর্গ আর নরকের চোখে যারা
ছায়ার মতন শুধু বিবেচনাধীন?

আমরাও প্রবাহিত হয়ে জেগে আছি-
তরঙ্গের মতো নয়, আসক্ত, নীরব এক থামের মতন
পৃথিবীর থামের মতন তবু নয়
এইখানে যুগপৎ সকল সময় সম্পৃক্ত হয়ে রয়।

মৌসুমি মেঘের সাথে মিশে আছে ফাল্গুনের রোদ
অসম্ভব প্রত্যবায় বুকে ধ’রে নিশিত আমোদ
পিরামিডদের মতো স্থির স্তম্ভকে ভেঙে ফেলে
পিরামিডদের মতো কালো স্তম্ভকে গ’ড়ে
ঘুম, পাপ, লোকসেবা, নৃত্যের ভিতরে।