আজকের এক মুহূর্ত

হে মৃত্যু,
তুমি আমাকে ছেড়ে চলছ ব’লে আমি খুব গভীর খুশি?
কিন্তু আরও খানিকটা চেয়েছিলাম;
চারি দিকে তুমি হাড়ের পাহাড় বানিয়ে রেখেছ;-
যে ঘোড়ায় চ’ড়ে আমি
অতীত ঋষিদের সঙ্গে আকাশে নক্ষত্রে উড়ে যাব
এইখানে মৃতবৎসা, মাতাল, ভিখারি ও কুকুরদের ভিড়ে
কোথায় তাকে রেখে দিলে তুমি?

এত দিন ব’সে পুরোনো বীজগণিতের শেষ পাতা শেষ করতে-না-করতেই
সমস্ত মিথ্যা প্রমাণিত হ’য়ে গেল;
কোনও-এক গভীর নতুন বীজগণিত যেন
পরিহাসের চোখ নিয়ে অপেক্ষা করছে;-
আবার মিথ্যা প্রমাণিত হবে ব’লে?
সে-ই শেষ সত্য ব’লে?
জীবন: ভারতের, চীনের, আফ্রিকার নদীপাহাড়ে বিচরণের মূঢ় আনন্দ নয় আর
বরং নির্ভীক বীরদের রচিত পৃথিবীর ছিদ্রে-ছিদ্রে
ইস্ক্রুপের মতো আটকে থাকবার শৌর্য ও আমোদ:
তারপর চুম্বক পাহাড়ে গিয়ে নিস্তব্ধ হবার মতো আস্বাদ?

জীবন: নির্ভীক নারীদের সৌন্দর্যের আঘাতে
নিগ্রো সংগীতের বেদনার ধূলোরাশি?
কিন্তু এ বেদনা আত্মিক, তাই ঝাপসা- একাকী: তাই কিছু নয়-
কিন্তু তিলে-তিলে আঁটকে থাকবার বেদনা:
পৃথিবীর সমস্ত কুকুর ফুটপাতে বোধ করছে আজ।

যেন এতদিনের বীজগণিত কিছু নয়,
যেন নতুন বীজগণিত নিয়ে এসেছে আকাশ!

বাংলার পাড়াগাঁয়ে শীতের জ্যোৎস্নায় আমি কত বার দেখলাম
কত বালিকাকে নিয়ে গেল বাঘ- জঙ্গলের অন্ধকারে;
কত বার হটেনটট-জুলু দম্পতির প্রেমের কথাবার্তার ভিতর
আফ্রিকার সিংহকে লাফিয়ে পড়তে দেখলাম;

কিন্তু সেই সব মূঢ়তার দিন নেই আর সিংহদের;
নীলিমার থেকে সমুদ্রের থেকে উঠে এসে
পরিস্ফূট রোদের ভিতর
উজ্জ্বল দেহ অদৃশ্য রাখে তারা;
সাদা, হলদে, লাল, কালো মানুষদের
আর কোনও শেষ বক্তব্য আছে কি না জিজ্ঞাসা করে।

যে-ঘোড়ায় চ’ড়ে আমরা অতীত ঋষিদের সঙ্গে আকাশে নক্ষত্রে উড়ে যাব
সেই সব সাদা-সাদা ঘোড়ার ভিড়
যেন কোন জ্যোৎস্নার নদীকে ঘিরে
নিস্তব্ধ হ’য়ে অপেক্ষা করছে কোথাও;

আমার হৃদয়ের ভিতর
সেই সুপক্ক রাত্রির গন্ধ পাই আমি।