এই মেয়েটির মুখে

এই মেয়েটির মুখে মৃত্যুদণ্ড খেলা করে আজ এই শরতের ভোরে
যখন ঘুমায়েছিল কাল রাতে- হয়তো-বা অদ্ভুত মনীষা
এসেছিল তাহার হৃদয়ে নেমে- পায়রা’র মতো শীর্ণ
প্রত্যঙ্গ কাঁপায়ে- সচকিত ক’রে দিয়ে চ’লে যেতে তবে
স্বাভাবিক সুস্থতাকে; জানি আমি এখন এ-আলো-অন্ধকারে সর্বদাই
খেলা করে শুষ্ক রুচি- আশ্চর্য আদিম কোনও ঔরসের থেকে যারা
জন্ম লাভ ক’রে- ক্রমে- ধূসর করেছে চুল পৃথিবীতে
দেখে গেছে দূর মধ্যসমুদ্রকে স্ফীত হতে
নির্জন ধোঁয়াটে রঙে- তারও পিছে অধিক নিস্তব্ধ হয়ে জেগে আছে
ব্রহ্মা’র দেয়াল- যাহারা পাথর দেখে চ’লে গেছে প্রান্তরের পথে
লিচেনে সবুজ, সাদা, কমলা’র বাকলের মতো ধূর্ত রঙে
তিসি’র বীজের মতো আয়তনে রূপের প্রতিজ্ঞাপাশ-
প্রণয়ের- সুস্বাদের- চলমান সমস্ত সৃষ্টির;
অথবা মাঠের ঢিল প্রাণ পেয়ে অবহিত হয়ে থাকে
সূর্যের আলোয় রোজ- পৃথিবীর ডাইঅরনল গমনের সাথে
সে-ও ঘোরে জীবিত ও মৃতদের সমস্ত নিয়মে তুষ্ট হয়ে
তাহারা তৃপ্তির মতো এসেছিল এক-দিন পৃথিবীতে
আকাশে চিলের ডানা প্যাগোডা’র পারে নীল বাতাসে ধর্মের কলে
ব্যবহৃত হয়ে সাদা তুলার আঁশের মতো সারি-সারি উড়ে
নেউল-ধূসর দূর জলের মতন কবে তার পর
সম্ভ্রমে গিয়েছে চ’লে- সমুজ্জ্বল অসূয়ায় দূরতর আকাশকে
শ্রেয়োতর নীল ব’লে মনে ক’রে। বিলুপ্ত, প্রশান্ত ভূত সব।
যেন তারা সমুদ্রের আন্দোলিত পেট আজ- লঘুগতি দিকহস্তীদের মতো
ধবল মেঘের ঢেউয়ে অবিকল;- পাহাড়ের শিঙের উপরে
শকুনের আকৃতির মতো লোষ্ট্র: যখন সে সময় ও সীমানার শেষে উড়ে
তার পর স্থির হয়ে ব’সে থাকে সৃষ্টির অপর সঙ্কল্পকে- তার-
নতুন আভাকে চুপে অত্যধিক ধ্যান ক’রে
পেয়ে যায় ক্রমে তার জরায়ুতে পরিপূর্ণ ডিমের মতন।
হয়তো-বা স্বপ্ন সব- আধো-মিথ্যা- সম্পূর্ণ অনৃত।
ভেবেছি এ-সব সত্য কখনও-কখনও আমি। তুরস্ক-মণির মতো
ভোরের উজ্জ্বল রৌদ্রে- সম্মুখীন- নদীর উপরে অই
রাজহাঁস-কয়টিকে মনে হয়- হয়তো ওদের পিঠে এক-দিন
চড়েছিল যাজ্ঞবল্ক্য- যখন সহজ জল-গ্লবিউল’কে
মানুষের বিমুক্ত আত্মার মতো মনে হত।
এখানে নদীর পারে আমি এক পিপুল-বৃক্ষকে
বহু ক্ষণ স্পর্শ ক’রে অনুভব করি। সেই অনুভূতি
ঘরে তুলে নিয়ে যাই। সকলের তরে নয়। হয়তো নরক নাই
তবুও স্বর্গে শোধিত হব প্রত্যেকেই আমাদের নিজেদের দ্বার দিয়ে।