এই নিশীথের পারে ব’সে

এই নিশীথের পারে ব’সে আমার রুধিরে কোনও দূর বাতাসের
শব্দ শুনি যেন;
যেন বিদেশের ঘনসন্নিবিষ্ট প্রাসাদরাশির মতো মনে হয়
এই পৃথিবীরে; জানালায় কারা আসে- কারা অন্তঃপুরে চ’লে যায়
কাহাদের কলরব? কোন ধূমা? সে কোন ভাষায় কথা বলে
যেন কোনও দায়িত্ববিহীন জ্যামিতিক অস্পষ্টতা মানুষের মনে
ফাল্গুনের দু’-পহরে বোলতা’র মতো তারা নীড় রচনার কাজে
নিপীড়িত- পরিকীর্ণ- সাধু- সমীচীন-
কোনও সুদূর হাওয়ার শব্দ তবু তারা শোনে না ক’
জনসাধারণ যেন ভিড় ক’রে ফিরিতেছে- শৃঙ্খলের নির্মন প্রয়োগ
চায় তারা; প্রভাতে ঘুমের থেকে উঠে রুটিনের মানচিত্র
কার্যতালিকার গোলাকার গ্লোব;- কোনও এক অদৃশ্য শিক্ষক
নিয়ন্ত্রণ করিতেছে সব যেন- যার নামে অন্ধকারে শপথের প্রয়োজন
হতে পারে;- এই সব তাহাদের প্রয়োজন
জনসাধারণ যেন ভিড় ক’রে ফিরিতেছে- তাদের হৃদয়
বিরাট মক্ষিকাগার যেন; জীবনের সমীচীন ব্যবহার ছাড়া
কেউ মধু পায় না ক’- তারা জানে; তাহাদের রক্তে কোনও দূর
লুক্কায়িত মহাসাগরের বিচরণ নাই
তারা যূথচারী হতে চায় কোনও অনুভূতিশীল মেষপালকের হাতে
শৃঙ্খলিত হতে চায় ব্যাঙ্ক’এ, ফ্যাক্টরি’তে, রাজপরিষদে
দুই গজ প্রকোষ্ঠেও- উষ্ণ অনুমেয় খানিকটা জীবিকার তেল নিয়ে, আহা
বিরুদ্ধ বাতাসের শূন্য কুয়াশার থেকে তারা উদ্বর্তিত হয়ে
কোনও আঁধার ভাঁড়ার থেকে কোনও তুচ্ছ নিদর্শন নিয়ে
তারে সেনাপতি, করুণার অবতার, অন্ন-অর্থ-গৃহের দেবতা মনে ক’রে
আমরণ আরাধনা করিবার গভীর ক্ষমতা রাখে।

বিদ্রোহের থেকে বেকার- জনতা থেকে জন
উঠে এসে বিচিত্র মজুরি চায়- সেধে যাবে- যত দিন প্রাণবায়ু রবে
মৃত্যুর আশ্চর্য স্ফীতি তার পর
মুচিকেও ইন্দ্রধনু গাড়ি দেবে মহারাজকুমারের মতো
কোনও দূর দয়ালুর নিরাপদ পুরস্কারে উড়ে যেতে
এই সব জনতাকে তাহাদের যুথ থেকে টেনে নিয়ে
অনুভূতিশীল সেই মেষপালকের
নাসিকার ছায়া থেকে দূরে নিয়ে
ইহাদের সেনাপতি- করুণার অবতার- অন্ন-অর্থ-গৃহের দেবতা থেকে
তুলে নিয়ে যাই যদি;- তবু অন্তরঙ্গ ব্যবহার নিয়ে
এদের মক্ষিকাগার ভেঙে দিলে প্রবঞ্চিত হবে এরা
ম’রে যাবে- উড়ে যাবে
হয়তো-বা কোনও উঁচু জামরুল-পল্লবের কোলে
আর-এক বার নীড় বিরচিবে
অন্ধকার- রৌদ্র- মেঘ- জামিরের পল্লব- নীলিমা-
পিছনের ভূমি হয়ে তবু প’ড়ে র’বে তাহাদের জীবনের
অগোচর সরীসৃপদের পরিত্যক্ত গৃহের মতন।