এইখানে প্রভাতের রৌদ্রে

এইখানে প্রভাতের রৌদ্রে
অবিরল পরথুপী ঘাসের এই প্রান্তরের উপরে দাঁড়ায়ে
কমঠের মতো চিত্ত পৃথিবীর উপপত্তি: ধর্ম-রাজনীতিকদের নিষ্ফলতা মনে ক’রে
তবুও অপর কোনও ইশারায় ধবল পাখির মতো ডানা পেতে চায়
যেন ঐ নীলিমায় শ্বেত মেঘ পৃথিবীর কোনও গজেন্দ্রের মুণ্ড নয় শুধু:
যার মাংস শ্লথ হয়- ঘুম পায়- অসম্ভব স্বপ্ন দেখে
ধনীদের ক্রীতদাস হয়ে অরণ্যেরে ভুলে যেতে চায়
মদিরা- মৈথুন- ঘাম- জুগুপ্সার বিদারণ-
অস্থির রুটিন যারে দেহপিণ্ড ক’রে রাখে শুধু
যে স্থবির হয়ে যায়- মৃত্যু যারে ঘিরে ধরে
আহা, অই নীলিমার যূথচারী সাদা মেঘগুলো
পৃথিবীর সেই শক্ত বর্ণহীন প্রচলিত প্রথা থেকে
আমাদের হৃদয়েরে ডেকে যায় এক-আধ বার।
স্ফটিকের মতো এই উজ্জ্বল রৌদ্রের ভোরে- এ-শিশিরে-
এই নীল পরথুপী ঘাসের প্রান্তরে
আমরা কি জেগে আছি?
আমাদের ব্যাঙ্ক- আমাদের ভৌগোলিক মানচিত্রে প্রকৃতিরে ঠেলে ফেলে

রাজনীতি-মনীষীর অবিরল জুয়াড়ির খেলা
আমাদের বলয়িত সন্দেহের অনিবার কর্মিকতা
আমাদের রোমাঞ্চিত অক্লান্তিকে মূল্যবান বন্ধকের মতো বুকে রাখা-
বুকে ক’রে রাখা
তার পর আঁধার লিম্বাে’র গর্ভে তারে ছুঁড়ে ফেলা- নতুন অক্লান্তি কিনে;
যারা পারে- যারা পারে না ক’ তাহাদের শেষ রক্ত স্টিলের গেলাসে ক’রে
তুলে দিতে হবে
মদিরার মতো;
তবুও মদ্যপ নাই- অবসর নাই কারু- দু’-একটি মূর্খ শিশু ছাড়া
টেবিলের চার-পাশে ব’সে তাহা পান করিবার সুস্থিরতা নাই কিছু
(রুটিনের তরে শুধু- সন্দিহান আরও গাঢ় ভয়াবহ রুটিনের তরে)
আমাদের মানব-কর্তব্য, তৃষ্ণা, দায়িত্ব ছুটিতে আছে- নিরুদ্দেশ- দিনরাত;
আমরা কি জেগে আছি?

মনে হয় রক্ত- সাদা বিরাট প্রাসাদ- নীতি- ধর্মমন্দিরের দিকে চেয়ে
কোথাও মানুষ নাই- ধীর মনে ঘাসের তরঙ্গ দিয়ে চ’লে যাবে
সব ডিভিডেন্ড ভুলে গিয়ে (মঙ্গল গ্রহের) এক তৃণাঞ্চিত মাঠের আঁধারে- নবীন আস্বাদে
খানিকটা জল আর তারকার আলো নিয়ে
বিলোল রীতির দিন রুদ্ধ ক’রে তাহারে নগ্নতা দেবে- নতুন জন্মের ব্যথা নাই।

তবু তার পরিবর্তে যেন ঢের অরুন্তুদ জল
সঞ্চিত রগড় ফেলে বিলাপের মতো উঠে এসে
শিকড়ের দেশে আবার প্রত্যাশা হয়ে উচ্ছলিবে
সেই প্রত্যাসন্ন মনোনারীদের শব্দ শুনি
নৃমুণ্ডের অভিভূত ক্যাম্পে
রক্ত ভগ্ন পেয়ালার ফাটলের কালো-কালো দাগে
অন্ধকার নিরুদ্দেশ গলির ইশারা আর ন্যায়ান্যায় থাকিবে না চির-দিন

আজ মোরা জেগে নেই
যেন সব মোহাবিষ্ট ধর্মযাজিকার মতো
কালো ঘোমটায় ঢেকে আমাদের পবিত্র নাসিকা
নিশির-ডাকের মতো শব্দহীন বাতাসের ইশারায়
মূঢ় হয়ে চলিতেছি
গোবি-মরুভূমির ভ্রান্ত আকাশের নিচে
যেইখানে কিছু নাই সেই সব বিছানার কঙ্কালের দিকে
অস্পষ্ট মৃত্যুর তরে।